রূপম ইসলাম মানে লাখ লাখ মানুষের আবেগ। তিনি মঞ্চে দাঁড়ানো মানেই হাততালির বন্যা আর জয় রক ধ্বনিতে অডিটোরিয়াম গমগম করা। রবিবার রাতে একক অনুষ্ঠান রূপমের। সেখানেই গিটার হাতে প্রতিবাদী বাংলার এই রক শিল্পী। আরও পড়ুন-'সোনাম ওয়াংচুক আমার আদর্শ..', আসল র্যাঞ্চোকে সমর্থন, সন্দেশখালি ইস্যুতে ট্রোলড অরিজিৎ সিং
রূপমের কণ্ঠ, গানের কথায় যেমন রয়েছে প্রেম-আবেগ, তেমনই তাঁর গানের প্রতিটা শব্দে প্রতিবাদ। ৫৩তম এককের মঞ্চে দাঁড়িয়েও ফের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সোচ্চার তিনি। গর্জে উঠলেন সোনাম ওয়াংচুককে নিয়ে। এর আগে এককের মঞ্চে উমর খালিদকে সমর্থন করায় ‘সন্ত্রাসবাদী’, ‘দেশদ্রোহী’ বলে কটাক্ষ করেছিল ট্রোল পুলিশরা। সেইসবকে পাত্তা দেননি রূপম।
রবিবার নজরুল মঞ্চে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আগুন ঝরালো রূপমের গিটার। বললেন,'বেশি প্রতিবাদী হলে আমার ফোনে আড়ি পাতা হবে। পিছনে তাড়া করবে ট্রেন্ড ডগ। পালাতে হবে সব ছেড়ে। তবুও এভাবেই জানাবো প্রতিবাদ'। লাদাঘের পরিবেশ রক্ষার জন্য,প্রকৃতিকে বাঁচানোর জন্য সোনম ওয়াংচুকের টানা ২১ দিন অনশন ধাক্কা দিয়েছে রূপমকে। গাইতে গাইতেই রূপমের পিছনের জায়েন্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠল সেই প্রতিবাদী মানুষটার ছবি। করতালিতে ভরে উঠল গোটা অডিটোরিয়াম। প্রতিবাদের এমন ছবি বর্তমানের শিল্পীদের মধ্যে সত্যি বিরল। ‘হায় আদালত! কখনও দুশ্চিন্তা হয়,কোথায় পাব বিচার’, প্রশ্ন রূপমের, গায়ক যেন হয়ে উঠলেন ‘বাংলার বব ডিলান’।
রূপমের এই অনুষ্ঠানে পৌঁছেছিলেন পরিচালক পারমিতা মুন্সী। সোশ্যাল মিডিয়ায় রূপমের হয়ে কলম ধরলেন ‘গুহা মানব’ পরিচালক। তিনি লেখেন, ‘আজ নজরুল মঞ্চে, হাউসফুল হলে তুই সোনম ওয়াংচুকে নিয়ে কথা বললি। কেউ তো বলছে না। তুই বললি। আমার জানার মধ্যে তুই প্রথম পাবলিক ফিগার, যে ওনাকে নিয়ে বললি! এর বাইরেও স্পষ্ট করলি নিজের অবস্থান। কোনও রঙ গায়ে না মেখেও যে পপুলার ম্যাজিক তৈরী করা যায়, তার নিদর্শন তুই। তোর গান শুনতে শুনতে আজ মনে হচ্ছিল, কেন আজকের তরুণ প্রজন্মের তোকে নিয়ে এত উন্মাদনা। তুই এই সময়টাকে একদম খপাৎ করে ধরে গান বেঁধেছিস। তাই সময়টাও তোকে মাথায় করে রেখেছে। তুই যে কতখানি স্বতন্ত্র... কতখানি অন্তর থেকে শিল্পী, তা দেখেছি অনেকবার। আজ এই এককের মঞ্চে নিজে সব সংগীত যন্ত্র বাজিয়ে, তুই যা পারফর্ম করলি, তা তুলনাহীন! তোর মতো ব্যক্তিত্বকে গড়পড়তা সিস্টেম ভয় পাবে। আর সেসব গায়ে না মেখে তুই এগিয়ে যাবি, সেটাও জানি। কারণ তুই হলি প্রকৃত রকস্টার! তোর রকবাজিকে কুর্ণিশ জানাই। তুই যে বললি, প্রেম একটা বিপ্লব। ঠিক বললি। প্রেমই আসল বিপ্লব। প্রেম যে ঠিক করে করতে পারে, সে সব করতে পারে। তুই আজীবন এমন প্রেমিক থাক বন্ধু।’
লাদাঘের অস্তিত্ব সংকটে। নিজের মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য লড়াই চালাচ্ছেন সোনাম ওয়াংচুক। তিনিই ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর ‘র্যাঞ্চো’। লাদাঘের এই ইঞ্জিনিয়ারের আদলেই তৈরি হয়েছিল রাজু হিরানির ছবির রঞ্ছোড়দাস শ্যামলদাস চাঁচড়ের চরিত্র। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার তবে সার্বিক ভাবে একজন শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী এবং পরিবেশরক্ষা আন্দোলন কর্মী তিনি। তাঁর আন্দোলনে আগেই পাশে দাঁড়িয়েছেন অরিজিৎ, এবার সঙ্গ দিলেন রূপম ইসলাম।
কিছুদিন আগেই সোনাম ওয়াংচুককে নিয়ে টুইট করেন অরিজিৎ। স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে দীক্ষিত অরিজি লেখেন, ‘আমার ভালোবাসার মানুষ, আমার আজকের দিনের আদর্শ, সোনাম ওয়াংচুক…..আপনার লড়াই আরও শক্তিশালী হোক’।
শুধু সোনাম ওয়াংচুক নয়, ধর্ষকদের বিরুদ্ধে, সিরিয়া থেকে ইউক্রেন, হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের যুদ্ধে অকালে প্রাণ হারানো নিয়েও গর্জে উঠল রূপমের গিটার। তবুও গানে গানে যুদ্ধহীন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখালেন শিল্পী।