লাদাঘের অস্তিত্ব সংকটে। নিজের মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য লড়াই চালাচ্ছেন সোনাম ওয়াংচুক। তিনিই ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর ‘র্যাঞ্চো’। লাদাঘের এই ইঞ্জিনিয়ারের আদলেই তৈরি হয়েছিল রাজু হিরানির ছবির রঞ্ছোড়দাস শ্যামলদাস চাঁচড়ের চরিত্র। ছবির শেষদৃশ্যে অবশ্য আমির জানান, তাঁর আসল নাম ফুংসুক ওয়াংড়ু। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার তবে সার্বিক ভাবে একজন শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী এবং পরিবেশরক্ষা আন্দোলন কর্মী তিনি।
খাবার ছেড়ে ২১ দিন নুন-জল খেয়ে থেকেছেন। ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন, অবশেষে গত মঙ্গলবার অনশন প্রত্যাহার করে নেন। তবে লাদাঘের খোলা আকাশের নীচে বসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও তাঁর ডাকে সাড়া দেয়নি কেন্দ্র। তবে লাদাঘে গিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন টলিউডের পাভেল, বলিউডের প্রকাশ রাজ। তবে এবার গোটা দেশের হার্টথ্রব অরিজিৎ সিং-কে পাশে পেলেন এই পরিবেশ কর্মী।
নিজের ব্যক্তিগত এক্স (অতীতে টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট করেছেন গায়ক অরিজিৎ সিং। যার জেরে ঝড় বয়ে গেছে নেটমাধ্যমে। ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রাম সবেতেই অরিজিতের অফিসিয়্যাল অ্যাকাউন্ট রয়েছে ঠিকই কিন্তু তা পরিচালনা করে গায়কের ম্যানেজমেন্ট। অরিজিতের একটি ব্যক্তিগত এক্স অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সেখানে অরিজিতের নামের পাশে ব্লু টিক নেই ঠিকই, কিন্তু অরিজিৎ-এর অন্ধ ভক্তরা জানে @Atmojoarjalojo এই হ্যান্ডেলটি তাঁদের প্রিয় গায়কের।
স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে দীক্ষিত অরিজিৎ। সে কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন বহুবার। এবার নিজের ‘মর্ডান আইডল’ হিসাবে সোনাম ওয়াংচুকে বেছে নিলেন তিনি। গায়ক টুইটে লেখেন, ‘আমার ভালোবাসার মানুষ, আমার আজকের দিনের আদর্শ, সোনাম ওয়াংচুক…..আপনার লড়াই আরও শক্তিশালী হোক’।
এই পোস্টের জেরেই কটাক্ষের মুখে ‘তুম হি হো’ গায়ক। এক নেটিজেন অরিজিৎকে বিদ্রুপ করে বলেন, ‘ভেবেছিলাম আপনি বাংলার সন্দেশখালি মহিলাদের জন্য প্রথমে কিছু বলবেন…’। অপর একজন অরিজিৎকে উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘এই সব বিতর্কিত বিষয় থেকে দূরে থাকুন না মশাই’। তবে অরিজিৎ ভক্তরা গায়কের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। গর্বে বুক ফুলছে তাঁদের। একজন লেখেন, ‘ইতিহাস হয়ত তোমাকে কিংবদন্তি গায়ক হিসাবেই মনে রাখবে, তবে সৎ, সাহসী এবং শিরদাঁড়া সোজা রয়েছে এমন একজন মানুষ তুমি, কুর্নিশ তোমাকে’।
সোনাম ওয়াংচুক ঘিরে পোস্টের পর আরও একটি ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিলেন গায়ক। নিজের এলোমেলো ভাবনাকে একত্রিত করে অরিজিৎ লিখেছেন, ‘আমার কিছু বলা উচিত, সেটা কী পার্থক্য গড়বে? আমার কিছু করা উচিত, কিন্তু কীভাবে করব? অনেক রাস্তা খোঁজার আছে, যদি আমি চারপাশে তাকাই…. কিন্তু আমি বাঁধা পড়ে আছি নিজেতেই’।
চার দফা দাবিতে অনশনে বসেছিলেন সোনাম ওয়াংচুক। প্রথমটি হল লাদাখকে রাজ্যের সম্মান দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, লে এবং কার্গিল জেলার জন্য আলাদা আলাদা লোকসভা আসন, লাদাখের জন্য আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন এবং তাতে চাকরি দেওয়ার আলাদা প্রক্রিয়ার প্রচলন। তিন নম্বর, খনি ব্যবসায়ী এবং শিল্পগোষ্ঠীগুলির হাত থেকে লাদাখের প্রকৃতিকে রক্ষা করা। চতুর্থ ও সর্বোপরি বিধানের ষষ্ঠ তফসিল নিশ্চয়তার নিরাপত্তা বলবৎ করতে হবে লাদাঘে। দীর্ঘদিন আগেই মোদী লাদাঘের মানুষকে এই চার দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।