ওটিটি প্ল্য়াটফর্মের কনটেন্টে ‘ক্রমবর্ধমান অশ্লীলতা এবং অপমানজনক ভাষা’র ব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সেন্সরশিপের বালাই না থাকায় লম্বা সময় ধরে একাধিক প্ল্যাটফর্মে ‘ভ্যালগার’ বা ‘অশ্লীল’ কটেন্ট দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ। এবার কেন্দ্র সরকারের তরফে নেটফ্লিক্স, ডিজনি, আমাজনের মতো স্ট্রিমিং জায়েন্টদের নির্দেশ দিল স্বাধীনভাবে সংস্থার তরফ থেকে নিজস্ব কনটেন্ট ঝাড়াই-বাছাই করতে হবে। অনলাইনে কোনও সিরিজ, সিনেমা সম্প্রচার শুরু করবার আগে সেগুলো রিভিউ করতে হবে সংস্থাকেই।
তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় গত ২০শে জুন ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের সেই নির্দেশিকা। যদিও মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তে সহমত নয় সমস্ত ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। এর জেরেই এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভবপর হয়নি।
সরকারের এক সূত্র সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে ধরণের অশ্লীলতা, নগ্নতা এবং হিংসা তুলে ধরা হচ্ছে তা ভারতীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। এই নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছে সাংসদের সদস্যরা, সাধারণ জনতাও। বৈঠকের ‘মিটিং মিনিটস’-এ তা স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে আমাজন প্রাইম ভিডিয়ো এবং নেটফ্লিক্স, এই দুই স্ট্রিমিং জায়েন্ট ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ২০২৭ সালে ওটিটি সেক্টরের পরিধি বেড়ে দাঁড়াবে ৭ বিলিয়ান মার্কিন ডলারে।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বর্তমানে বলিউডের নামীদামী তারকারা কাজ করছেন। সেই কাজ নিয়েও কম সমালোচনা হয়নি। আইনি ঝামেলাতেও জড়াতে হয়েছে সইফ আলি খান, একতা কাপুরদের মতো তারকাদের। তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের ডাকা মিটিং-এ হাজির ছিল আমাজন, ডিজনি, নেটফ্লিক্স, রিলায়েন্স ব্রডকাস্ট ইউনিট, ভায়াকম ১৮ এবং অ্যাপেল টিভির প্রতিনিধিরা। যদিও এই ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে না-রাজ দুই পক্ষই।
কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, যে কোনও ওটিটি কনটেন্টের শুরুতে ৫০ সেকেন্ডের তামাক সংক্রান্ত সতর্কীকরণ বার্তা থাকবে, যেমনটা সিনেমা হলে চালানো হয়। সেই নিয়েও সহমত নয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলি। অন্যদিকে ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্মের কনটেন্টের রাশ নিজেদের হাতে রাখতে সরকার দু-বছর আগে স্বশাসিত সংস্থার হাতে দায়িত্ব দিয়েছিল তাকে বলা হয়েছিল স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচারিত কোনও কনটেন্টে আপত্তিজনক কিছু থাকলে তা খতিয়ে দেখবে সেই সংস্থা। এবার স্ব-নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দিতে চাইছে কেন্দ্র।
কোনও রকমের সেন্সর ছাড়াই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কনটেন্ট দর্শকদের কাছে না পৌঁছতে পারে তার জন্য আরও বেশি সতর্ক সরকার। গত মার্চ মাসে তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর জানান ওটিটি প্ল্য়াটফর্মে, ‘সৃজনশীলতার নামে অশ্লীল ভাষা সহ্য করা হবে না’। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আপত্তিজনক এবং অশ্লীল বিষয়বস্তুর ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে যা নিয়ে অভিযোগও জমা পড়ছে। যদি এই সংক্রান্ত নিয়মে কোনও পরিবর্তন করতে হয়, তবে মন্ত্রক সেটাও করতে প্রস্তুত। এই ধরনের প্ল্যাটফর্ম সৃজনশীলতাকে স্বাধীনতা দেয়, অশ্লীলতাকে নয়। কেউ যখন একটা সীমা অতিক্রম করে, তখন সৃজনশীলতার নামে গালিগালাজ, অভদ্রতা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। অন্তত সরকার এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া থেকে পিছপা হবে না।’
স্ট্রিমিং প্ল্য়াটফর্ম জানিয়েছে, বাবা-মা যাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে অ্যাপগুলি সেই বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকা হবে, পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক কনটেন্ট যোগ করার সময় আরও বেশি সতর্ক থাকা হবে। ওটিটি জায়েন্টরা আতঙ্কিত, সরকারি ‘ছাঁকনি'র বাড়বাড়ন্তে ক্ষতি হবে ব্যবসার।