থিয়েটারের জগতে নক্ষত্র পতন। চলে গেলেন বিশিষ্ট নাট্য কর্মী তথা ‘রঙ্গকর্মী’র প্রতিষ্ঠাতা ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়। মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। গতকাল তাঁর ভাইয়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান ছিল। ভাইয়ের মৃত্যুতে তিনি ভেঙে পড়েছিলেন। শ্রাদ্ধ থেকে ফেরার পর কিছুটা অসুস্থ বোধ করেন। অ্যাসিডিটির সমস্যা হয়। রাতে বার তিনেক বমিও হয়। আজ সকালে তাঁর পরিচারিকার নজরেই প্রথম বিষয়টা ধরা পড়ে। পরিচারিকা এসে দেখেন বাড়ির দরজা খোলা, উষা গঙ্গোপাধ্যায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মাটিতে পড়ে রয়েছেন। এরপর তিনিই সব প্রতিবেশীদের ডাকেন। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে দেহ ময়না তদন্তে পাঠানো হয়।
জন্ম সুত্রে ছিলেন কনৌজ ব্রাক্ষ্মণ। বাবা নাগেশ্বর পাণ্ডে। স্বামী কমলেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়। প্রথম জীবনে তিনি ছিলে একজন অসামান্যা নৃত্য শিল্পী। কলকাতায় আসার পর শ্রী শিক্ষায়াতন কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করে ১৯৭০ সালে শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটিতে। হিন্দি সাহিত্যের ওপর ছিল তাঁর অসাধারণ পান্ডিত্য। সেই বছরই তিনি যোগ দেন সঙ্গীত কলা মন্দির নাট্যদলে। সেখানে তাঁর প্রথম অভিনয় শুরু। এরপর কলকাতার আদাকার, পদাতিক, যবনিকা সহ বিভিন্ন দলে নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৭৬-এ নিজের নাটকের দল গড়ে তোলেন। ‘রঙ্গকর্মী’র জন্ম হয়। তারপর থেকেই একের পর এক মাস্টার স্ট্রোক। মহাভোজ, রুদালি, অন্তর্যাত্রা, কোর্ট মার্শাল, মুদ্রারাক্ষস, আন্ধের নগরী, হিম্মত মাঈ, বেচারা ভগবান- এর মত নাটক তাঁর দল পরিবেশন করেন। কেবল নাট্য ব্যক্তিত্ব হিসেবেই নয়, বিশিষ্ট সমাজ কর্মী হিসেবেও তিনি বিশেষ পরিচিত ছিলেন।
'গুড়িয়া ঘর' নাটকে অভিনয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান পান। ১৯৯৮-তে ‘সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডমি’ থেকে পুরস্কার পান। কলকাতায় বাংলার পাশাপাশি হিন্দি থিয়েটারকে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে ঊষা গঙ্গোপাধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বারবার প্রশংসা পেয়েছে তাঁর নাটক। বহু অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত হয়েছেন। বিনোদিনীর দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিলেন তিনি। একটা সময় থিয়েটারের মেয়েরা যে ভাবে আমাদের দেশে অবহেলা পেয়েছিলেন সেটা তাঁকে বারবার নাড়া দিয়েছে। তাঁর দলের ২০০ জন সদ্যস্যের মধ্যে ৯০ জন মেয়ে। সেই দলের সদস্যদের নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন বিনোদিনী মঞ্চ। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক কাজ কর্ম করা হয় থিয়েটার নিয়ে। সেই মঞ্চ যেন মেয়েদের নিজেকে প্রাণ খুলে মেলে ধরার জায়গা। প্রতিদিনই নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে কাজ এগোচ্ছিলো। এর মাঝেই ঘটে গেল নক্ষত্র পতন।