গোটা দেশে সমস্ত ফোন ও ইলেক্ট্রনিক গেজেটে একই চার্জিং সকেট ব্যবহার করা যায় কি না তা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করল কেন্দ্রীয় সরকার। বুধবার এই নিয়ে মোবাইল ফোন নির্মাতা ও অন্যান্য সমস্ত পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী রোহিত কুমার সিং। বৈঠকে তিনটি কমিটিকে এই পরিকল্পনা লাগু করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কী বলছে কেন্দ্র?
কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, দেশে বিভিন্ন ফোনে বিভিন্ন চার্জার ব্যবহার হওয়ার ফলে অধিকাংশ সময় প্রয়োজন না থাকলেও মানুষকে চার্জার কিনতে হয়। অনেক সময় বিশেষ ধরণের চার্জিং পোর্ট ব্যবহার করে সেই চার্জারের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে মোবাইল ফোন নির্মাণকারী সংস্থা। এতে গ্রাহকদের যেমন আর্থিক ক্ষতি হয়, তেমনই বিশ্বে ইলেক্ট্রনিক বর্জের পরিমাণ বাড়ে। সেক্ষেত্রে সব মোবাইল ফোনে একই চার্জিং পোর্ট ব্যবহার হলে এই সমস্যা মিটবে। একই চার্জার সমস্ত ফোনে ব্যবহার করা যাবে। একমাত্র চার্জার খারাপ হলে তবেই নতুন চার্জার কিনতে হবে গ্রাহককে।
কী বলছেন ফোন নির্মাতারা?
উলটো দিকে মোবাইল ফোন নির্মাতাদের একাংশের দাবি, সমস্ত ফোনে একই চার্জার ব্যবহার সম্ভব নয়। তাতে গুণমানের সঙ্গে আপোশ করা হয়। তাছাড়া এর ফলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মানুষ ভালো প্রযুক্তি বেছে নেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। তবে অধিকাংশ সংস্থাই একই রকমের পোর্ট ব্যবহারের পক্ষে সহমত হয়েছে।
বলে রাখি, বর্তমানে সমস্ত মোবাইল ফোন নির্মাতারই নিজেদের চার্জিং প্রযুক্তি রয়েছে। তার মধ্যে সব চেয়ে জনপ্রিয় চিপসেট নির্মাতা কোয়ালকমের কুইক চার্জ প্রযুক্তি।
অসম্ভব নয়, বলছেন প্রযুক্তি বিশেষরা
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্ত মোবাইল ফোনে প্রযুক্তিগত দিক থেকে একই চার্জিং পোর্ট ব্যবহার অসম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে চার্জারের সর্বোচ্চ চার্জিং কারেন্টের ওপর নির্ভর করবে চার্জিংয়ের গতি। ধরা যাক কোনও ফোন সর্বোচ্চ ৬৬ ওয়াট ক্ষমতায় চার্জ হতে পারে। সেটি সম্পূর্ণ চার্জ হতে লাগে ১ ঘণ্টা। ফোনটিকে ১৮ ওয়াট চার্জার দিয়ে চার্জ করলে সম্পূর্ণ চার্জ হতে ৪.৫ ঘণ্টা লাগবে। আর চার্জারের চার্জিংয়ের ক্ষমতা ব্যাটারির চার্জ হওয়ার ক্ষমতা থেকে বেশি হলে সর্বোচ্চ গতিতেই চার্জ হবে সেই ব্যাটারি।
লাভের গুড় পিঁপড়েয় খাবে, মত বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের
ইলেক্ট্রনিক্স গেটেজ বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে প্রতিযোগিতার বাজারে ফোন বিক্রি করে নামমাত্র লাভ হয় সংস্থাগুলির। তাই তারা চার্জার ও আফটার সেল সার্ভিস থেকে লাভের অংশ ঘরে তোলে।
কমিটির কী দায়িত্ব?সরকারের তরফে গঠিত ৩টি কমিটিকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে ফোন ছাড়া কোন কোন ডিভাইসে একই চার্জিং পোর্ট ব্যবহার সম্ভব? কোন চার্জিং পোর্ট সমস্ত ডিভাইসের জন্য উপযুক্ত হবে। সমস্ত পক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত তাদের সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে সরকার। কমিটি একই চার্জিং পোর্টের পক্ষে মত দিলে ২০২৪ সালের মধ্যে তা লাগু করবে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যে USB Type-C-কে কমন পোর্ট ঘোষণা করেছে ইউরোপিয় ইউনিয়ন।