পিৎজাকে এদেশের জনপ্রিয় খাবার করে তুলতে কোমর বেঁধে নামল ডমিনোজ। ভিন দেশী কত খাবার, কত সংস্কৃতিই তো আপন করে নিই আমরা। ঐতিহাসিক কাল থেকেই চলছে সেই প্রচলন, আজকের বিশ্বায়নের দুনিয়ায় তা যেন আরও সহজ স্বাভাবিক। পিৎজার সাথেও এদেশের মানুষের প্রথম পরিচয় হয় ১৯৯৬ সালে। বেঙ্গালুরুতে প্রথম আউটলেট খোলে পিৎজাহাট।
বিগত এক দশকে জলখাবার হিসেবে কিংবা রাতের নৈশভোজের পাতে ক্রমে জনপ্রিয় হয়েছে এই খাবার। তবে একথাও সত্যি বেশিরভাগ পিৎজাই এদেশের আমজনতার বাজেটের বাইরে। পিৎজা মার্কিন মুলুকে নিত্য দিনের আর পাঁচটা খাবারের মত অতিসাধারণ হলেও ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। প্রতিটি দেশ বা অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাস আলাদা আলাদা হওয়াই স্বাভাবিক। আর এদেশে পিৎজা আউটলেটগুলিতে পিৎজার দাম ভারতীয়দের জলখাবারের খরচের সাপেক্ষে অনেকটাই বেশি।
ডমিনোজের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সেই দিকেই এবার নজর দিল ডমিনোজ। মাত্র ৪৯ টাকায় বাজারে নতুন পিৎজা নিয়ে এল তারা। 'বিশ্বের সবচেয়ে সস্তার পিৎজা' বলে বিজ্ঞাপনী প্রচারেও নেমেছে সংস্থাটি। এতদিন পর্যন্ত ডমিনোজের সবচেয়ে কমদামের পিৎজার দাম ছিল ৫৯ টাকা। তাতে শুধু টমেটো টপিংয়ের পিৎজা পাওয়া যেত। তারপরেই ছিল ৬৯ টাকার অনিয়ন পিৎজা।
কিন্তু, মাত্র ৪৯ টাকায় ডমিনোজের পিৎজা পাওয়া আদেও সম্ভব? ইতিমধ্যেই ডমিনোজের অ্যাপে এসে গিয়েছে 'ক্লাসিক' নামের এই পিৎজা। এটা অনেকটা চিজ টোস্টের মতোই খেতে হবে। আলাদা করে কোনও টপিং দেওয়া হয়নি এক্ষেত্রে। পিৎজাটর সাইজ সাত ইঞ্চি। এর ফ্রেশ প্যান পিৎজা বেস নিলে দাম পড়বে ৯৪ টাকা। এই প্রসঙ্গে সংস্থার সিইও সমীর ক্ষেত্রপাল জানিয়েছেন, কম দামের পিৎজার বাজার পেতেই এই অল্প দামের পিৎজা আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ৪৯ টাকার পিৎজার কথা শুনলেই গ্রাহকরা দোকানে আসবেন।
বর্তমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সংকটের বাজারে গ্রাহকদের 'পকেট ফ্রেন্ডলি' পিৎজা খাইয়ে বাজার ধরাই লক্ষ্য ডমিনোজের। সমীর ক্ষেত্রপাল আরও বলেন, 'সব জায়গায় পিৎজার দাম অনেক বেশি। আমাদের গ্রাহকরা যেন অন্য কোথাও চলে না যান, সেই জন্যই এই অভিনব উদ্যোগ।'
জানলে অবাক হবেন কেবল মাত্র ভারতের জন্যই এত সস্তার পিৎজা এনেছে সংস্থাটি। উল্লেখ্য সান ফ্রান্সিসকোতে সবচেয়ে সস্তার পিৎজার দাম ১২ ডলার। অর্থাৎ, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৯৮৪ টাকা। ভারতে সেই দামে অনেক বেশি টপিং সহ প্রিমিয়াম পিৎজা পাওয়া যাবে। নির্দিষ্ট দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা বিচার করেই ব্যবসার জাল ছড়াই এই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি। শুধু ডমিনোজই নয়। কেএফসি, বার্গার কিং, পিৎজা হাট সহ সমস্ত বিদেশি ফাস্ট ফুড চেন-ই ভারতের জন্য নতুন করে মেনু সাজাচ্ছে।
জুবিল্যান্ট ফুডওয়ার্কস ভারতে ডোমিনোজের ১,৮১৬টি আউটলেট চালায়। ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে তাদের মুনাফা ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আগামীতে কোন ধরনের খাবার পছন্দ করে দেশের মানুষ, তার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।
ভারতের ফাস্ট ফুডের বাজার ধরা ইউরোপীয় বা আমেরিকান দেশগুলির মত সহজ নয়। বহু মুখরোচক খাবার পাওয়া যায় নিন্মবিত্ত-মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যেই। ফুচকা, মোমো থেকে পাপড়িচাট কিংবা কাবাব, চাউমিন রকমারি খাবারের পশরা নিয়ে পথে ঘাটে বসে বিক্রেতারা। এরমধ্যে ভিনদেশি পিৎজার বাজার দখল করতে পারা মুখের কথা নয়। ডমিনোজের ৪৯ টাটার ক্লাসিক পিৎজা কতটা লড়াই দিতে পারে ভারতের বাজারে, সেটাই দেখার জন্য মুখিয়ে সকলে।