‘এক দেশ এক নির্বাচন’ নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছতে বিরোধীদের সার্বিক ভাবে অংশগ্রহণ প্রয়োজন। তবেই এই প্রকল্প সফলভাবে রূপায়ন করা সম্ভব হবে। তেমনটাই মনে করে বিজেপি। অন্যদিকে বিরোধীদের একে ‘হাস্যকর অনুশীলন’ বলে মন্তব্য করেছে। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। যে কমিটির মাথায় রয়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তাঁকে নিশানা করেছে বিরোধীরা। তাঁকে কমিটিতে ‘সরকারের হাতিয়ার’ বলে মন্তব্য করেছে কংগ্রেস।
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সৈয়দ জাফর ইসলাম জানিয়েছেন, তাঁর দল ‘এক দেশ এক নির্বাচন’-এর রূপায়ণ করতে বদ্ধপরিকর। এতে নির্বাচন পরিচালনার খরচ অনেকটাই কমবে। তাই একে বাস্তবায়নে অন্যান্য দলেরও ঐক্যমত হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘এক দেশ এক নির্বাচনকে বাস্তবায়িত করতে গেলে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। একে বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।’ বিজেপি এই নীতি রূপায়নে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। কারণ এতে দেশের নির্বাচন পরিচালনার খরচ অনেকটাই কমবে এবং দেশের উৎপাদশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
প্রসঙ্গত, এই বিষয় নিয়ে বুধবার প্যানেল বৈঠকে বসে। সেই বৈঠকে অধীররঞ্জন চৌধুরীর পদত্যাগের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, প্যানেলে বিরোধীদলের সদস্যদের অনুপস্থিতি কী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা তৈরি করবে? এই প্রশ্নের জবাবে বিজেপির মুখাপাত্র বলেন, ‘কোনও বিরোধীদলের সদস্য না থাকলে কোনও সমস্যা তৈরি হবে না। কারণ এই উচ্চপর্যায়ে কমিটিতে অভিজ্ঞ সদস্যরা রয়েছেন। নেতৃত্বে রয়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। বিষয়টি নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তারা প্যানেলে থাকুক বা না থাকুক তাতে কিছু যায় আসে না। এক নির্বাচন এমন কোনও বিষয় নয় যা ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা বিরোধীদের বোঝা উচিত।’
অধীর চৌধুরী তাঁর পদত্যাগের নোটে লিখেছেন, ‘আমি বুঝতে পারিনি কেন আমাকে এই কমিটিতে রাখা হয়েছিল। আমি লোকসভায় কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব করতে পারি। কিন্তু এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্ষমতা আমার নেই। দলের সঙ্গে আলোচনা করেই আমাকে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।’
নোটে প্যানেলের প্রধান এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং রাজ্যসভায় বিরোধী দলের প্রাক্তন নেতা গুলাম নবি আজাদকে একহাত নিয়েছেন অধীর চৌধুরী। তিনি লিখেছেন, ‘দেশের একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কেন কমিটির নেতৃত্বে দিচ্ছেন? এটা খুবই অদ্ভুত। আর গোলাম নবি আজাদের অবস্থান সকলেই জানেন। বিষয়টি ক্রমশ হাস্যকর হয়ে উঠছে। রামনাথ কোবিন্দ কি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ? তিনি আসলে সরকারি হাতিয়ার ছাড়া আর কিছু নয়। ’
প্যানেলের তরফে এই বিষয়ে তাদের মতামত জানানোর জন্য সমস্ত রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ছয়টি জাতীয় দল, ৩৩টি স্থানীয় দল এবং সাতটি স্বীকৃত দলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
গঠন হওয়ার পর বুধবার দ্বিতীয় বৈঠকে বসে প্যানেল। সরকারি ভাবে নামকরণও করা হয়েছে প্যানেলের। এক দেশ এক নির্বাচন নিয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটি নাম দেওয়া হয়েছে। কমিটি মনে করছে এই নীতি কার্যকর হতে ২০২৯-এর লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত সময় লাগবে।