ইহুদি পড়ুয়াদের গণহত্যার ডাক দেওয়ার বিষয়টি কি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে? মার্কিন কংগ্রেসে সেই প্রশ্নের জবাবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুয়েটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টরা যে উত্তর দিলেন, তাতে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। সরাসরি ‘হ্যাঁ’ না বলে তাঁরা বলেন যে বিষয়টা পুরোপুরি প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করছে। যতক্ষণ না হিংসা হচ্ছে, ততক্ষণ ইহুদিদের হুমকি দিলেও কোনও পদক্ষেপ নাও করা হতে পারে। আর সেই উত্তরে তুমুল রোষের মুখে পড়েছেন তাঁরা। নেটিজেনরা তো বটেই, তাঁদের আক্রমণ শানিয়েছেন ধনকুবের বিল অ্যাকম্যানও। তাঁর বক্তব্য, আমেরিকার তিন শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা যা বলেছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে যে পুরোপুরি নৈতিকতা হারিয়েছেন তাঁরা। আদতে তাঁরা বোঝাতে চেয়েছেন যে শুধু গণহত্যার ডাক দিলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আচরণবিধি ভঙ্গ নাও করতে পারে। যদি আদতে গণহত্যা চালানো হয়, তবেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আচরণবিধি লঙ্ঘন করতে পারে।
কী নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত?
গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামাসের রকেট হামলার পর থেকে যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। আমেরিকার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদি-বিদ্বেষের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ইজরায়েলের বিরোধীরা। তার জেরে আতঙ্কে সিঁটিয়ে আছেন বলে দাবি করেছেন একাধিক ইহুদি পড়ুয়ারা। তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) মার্কিন কংগ্রেসের সামনে হাজিরা দেন ওই তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট।
সেখানে মার্কিন কংগ্রেস এলিস স্টেফানিক প্রশ্ন করেন, ইহুদি পড়ুয়াদের গণহত্যার ডাক দেওয়ার বিষয়টি কি ম্যাসাচুয়েটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির আচরণবিধি লঙ্ঘন করে? সেটার জবাবে বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যাসাচুয়েটসের প্রেসিডেন্ট জানান, প্রেক্ষাপটের উপর সেটা নির্ভর করছে। তা নিয়ে বারবার স্টেফানিক প্রশ্ন করলেও একই উত্তর দিতে থাকেন ম্যাসাচুয়েটসের প্রেসিডেন্ট। একই সুরে কথা বলেন পেনসিলভানিয়া এবং হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্টও। কেউ সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বলেননি। বরং ঘুরিয়ে ‘না’ বলছিলেন। তাতে রীতিমতো রেগে যান স্টেফানিক। হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্টকে সোজাসুজি বলে দেন, ‘আপনার পদত্যাগ করা উচিত।’
পরে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ স্টেফানিক লেখেন, ‘তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আচরণবিধি অনুযায়ী, ইহুদিদের গণহত্যার ডাক দেওয়ার বিষয়টি হেনস্থার পর্যায়ে পড়ে কিনা, সেটা নিয়ে মুখ খুলতে অস্বীকার করলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুয়েটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টরা। এমনকী তাঁরা বলে দিলেন যে প্রথমে ঘটনা ঘটতে হবে। অর্থাৎ প্রথমে গণহত্যা হোক। এটা স্রেফ মানা যায়। ওঁদের সকলের আজই ইস্তফা দেওয়া উচিত।’
আর সেই বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। ধনকুবের অ্যাকম্যান বলেন, 'ওই প্রেসিডেন্টদের উত্তরের মাধ্যমে ফুটে উঠছে যে শিক্ষা এবং নৈতিক ব্যর্থ হয়েছে। যা আমাদের কয়েকটি অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিহীন নেতৃত্বের বড় একটা অংশে ছড়িয়ে পড়েছে।' সঙ্গে তিনি বলেন, 'লজ্জার ওঁদের সকলের ইস্তফা দেওয়া উচিত। আর কেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ক্যাম্পাসে কেন ইহুদি-বিদ্বেষ জন্মেছে? এরকম প্রেসিডেন্ট থাকার জন্য।' একইসুরে অনেকেই আক্রমণ শানাতে থাকেন।
সেই তুমুল বিতর্কের মধ্যে পরে অবশ্য সাফাই দিয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট। একটি বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘ইহুদি পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে হিংসার ডাক দেওয়ার বিষয়টি হার্ভার্ড উপেক্ষা করে যাবে বলে যে ধারণা তৈরি হয়েছে, সেটার সঙ্গে কেউ কেউ স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকারের বিষয়টি গুলিয়ে ফেলছেন। ব্যাপারটা আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই। ইহুদি সম্প্রদায় বা অন্য কোনও ধর্মীয় বা জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনওরকম হিংসার ডাক দেওয়া বা গণহত্যার বিষয়টি জঘন্য। হার্ভার্ডে সেইসব বিষয়ের কোনও জায়গা নেই। যাঁরা আমাদের ইহুদি পড়ুয়াদের হুমকি দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।’