মালদায় বাস দুর্ঘটনায় দু’জন মহিলা মারা যান। আর মালদায় সভা করতে এসে মঙ্গলবার নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দু’জন নিহতের পরিবারকে সরকারি চাকরি এবং আর্থিক সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মালদার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে এই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। যা কার্যত মাস্টারস্ট্রোক। কারণ পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে এই পদক্ষেপ বেশ বড় ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করবে। পরিবার দুটিকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং পরিবারের এক সদস্যকে দেওয়া হবে সরকারি চাকরি বলে ঘোষণা করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
কেমন আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রকে? কেন্দ্রীয় সরকারের ১০০ দিনের কাজ–সহ একাধিক প্রকল্পকে নিশানা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেই তিনি রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রকে তুলোধনা করে বলেন, ‘আমাদের টাকা নিয়ে রাজনীতি করে। প্রকল্পের টাকা দেয় না। অথচ কেন্দ্রীয় টিম পাঠায়। রাজ্যের টাকা তুলে নিয়ে যায় কেন্দ্র। রাজ্যে করের টাকা তুলে নিয়ে যায় কেন্দ্র। কেন্দ্র সেই টাকা নিয়ে রাজনীতি করে। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে অশ্বডিম্ব করছে। উন্নাও, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটে কটা টিম যায়? আমাদের টাকা আমাদের দেওয়া হচ্ছে না। দিল্লির নেতারা ভোটের সময় কুৎসা অপ্রচার করে। কেন্দ্রে একগুচ্ছ কেলেঙ্কারি আছে। যা বলতে গেলে ভাষা স্তব্ধ হয়ে যাবে।’
উকুন–ছাড়পোকা প্রসঙ্গ উঠল কেন? বাংলার উন্নয়নের ফিরিস্তি দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সরকার যে উন্নয়ন করেছে একদিন তার জন্য সেলাম ঠুকতে হবে বলে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘এখানে যা কাজ আছে, পরিবার–পরিজন ছেড়ে দিয়ে বাইরে গিয়ে কাজ করার দরকার পড়ে না। একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে যাঁরা কাজ শেষ করেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ৭ হাজার কোটি টাকা তাঁদের দেয়নি। এই বছরও একশো দিনের কাজের একটি কোটাও দেয়নি বাংলাকে। জানুয়ারি মাস শেষ হয়ে গেল। মার্চ মাস পর্যন্ত অর্থবর্ষ। এত অভাবের মধ্যেও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, ঐক্যশ্রী, সবুজশ্রী করেও আমরা ১০ কোটি জব কার্ড হোল্ডারকে কাজ দিয়েছি। মাথায় উকুন হলে উকুন মেরে দিতে হয়। বাড়িতে যদি ছাড়পোকা থাকে, সেটিকে মেরে দিতে হয়। কিন্তু আমরা এখানে মানুষ মারার কথা বলছি না। আমরা বলছি, যাঁরা মিথ্যা কথা বলছেন, তাঁরা দেখে যান।’
মুখ্যমন্ত্রীর নিশানা ঠিক কী? আজ মালদায় বাংলার উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘উন্নয়নের জন্য একদিন এই বাংলাকে সালাম জানাতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় সমাধানের মাধ্যমে মালদায় ১২৩টি প্রকল্প করা হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে বহু কাজ হয়েছে। বালুরঘাটে নতুন করে বিমানবন্দর বানানো হচ্ছে। অনেকগুলি সংযোগকারী রাস্তা–সেতু হয়েছে। আমাদের রাজ্যে ৩০% সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মানুষ আছেন। কেন্দ্রীয় সরকার সংখ্যালঘু স্কলারশিপ বন্ধ করে দিয়েছে। কেন্দ্রের শাসকদল হিংসুটে। পয়সা দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কিল মারার গোঁসাই। মাছের তেলে মাছ ভাজার চেষ্টা। আমরা যদি চোর হই তোমরা ডাকাত। ২০২৪ সালের মধ্যে সব বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছবে।’
মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্য তাঁর সরকার কতটা কাজ করেছে সেটা উল্লেখ করেছেন তিনি। সেখানে বিজেপি নির্বাচন এলে এখানে আসে এবং মতুয়া তাস খেলে বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাই তাঁকে আজ সুর সপ্তমে চড়িয়ে বলতে শোনা গেল, ‘আপনারা সবাই নাগরিক বলেই ভোটাধিকার আছে। ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে— কি পোশাক পড়বেন, কি খাবেন,তাও বলে দেওয়া হবে। রাজ্যে ৪০% বেকারের সংখ্যা কম হয়েছে। মানুষের ঘরে বিনা পয়সায় চাল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কয়েকটা ডাকাত, গদ্দাররা দল থেকে বিদায় নেওয়ায় আমি খুশি। আজ আবাসের টাকা, মানুষের টাকা দিতে বারণ করা হচ্ছে। পুরুলিয়ার টাকা কেউ একজন পকেটে ঢুকিয়ে নিয়েছিল। আমি নিজের উদ্যোগে পুরুলিয়া ছেলেদের জন্য ব্যবস্থা করেছি। মতুয়াদের জন্য আমরা সবটা করেছি। ভোট এলে হঠাৎ একটু ভাত খেয়ে বিজেপি বলে আমি মতুয়ার বন্ধু। নাগরিকত্ব নিয়ে ওরা পুরোটাই ভুল বোঝাচ্ছে।’