ঝাড়খণ্ড থেকে মালদায় ফেরার পথে ফরাক্কা ব্যারেজে একশোর বেশি পরিযায়ী শ্রমিকদের আটকে দিল পুলিশ। শ্রমিকদের মধ্যে একদল যেমন হেঁটে সফর করছিলেন, তেমনই বেশ কয়েক জন সাইকেলে যাত্রা করছিলেন।
গত ১৪ দিনে নতুন সংক্রমণের খবর না পাওয়ার ফলে মালদাকে ‘অরেঞ্জ জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বহিরাগত শ্রমিকদের রুখে দেওয়া হয় বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ দিকে শ্রমিকদের অভিযোগ, মালদায় ঢোকার পরে তাঁদের বাধা দেন বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশকর্মীরা। সোমবার বিকেল থেকেই উত্তরবঙ্গের দিকে শ্রমিকদের যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে বসে থাকা শ্রমিকদের প্রশাসনের তরফে সোমবার বিকেল থেকে খাবার ও পানীয় জল দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন দুর্গতরা। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের জন্য সেই ব্যবস্থা করে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন।
কোচ বিহারের তুফানগঞ্জের বাসিন্দা এক শ্রমিক কার্তিক দাস জানিয়েছেন, ‘গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নদিয়ার ফুলিয়ায় শাড়িমিলে কাজ নিয়ে আমরা ১৪ জন পৌঁছাই। লকডাউন ঘোষণা করার পরে মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক দিন আগে নিজেদের মোবাইল ফোন বিক্রি করে সাইকেল কিনি বাড়ি ফেরার জন্য। কিন্তু এখন মালদা পুলিশ আমাদের বাঁধ পেরোতে দিচ্ছে না।’
আদতে বিহারের পুর্ণিয়ার বাসিন্দা আর এক শ্রমিক গোলাম জিলানি জানিয়েছেন, পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের এক বেসরকারি সংস্থায় তিবনি কাজ করতেন। লকডাউনে সংস্থা বন্ধ হয়ে গেলে তিনি মালদা হয়ে বিহারের ফেরার উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন। তাঁর দাবি, অনেক বার পুলিশকে অনুরোধ জানালেও তাঁকে মালদায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ফলে মাঝপথে অনিশ্চয়তার শিকার হতে হয়েছে তাঁকেও।
চন্দন মণ্ডল নামে মালদার চাঁচলের এতক শ্রমিক জানিয়েছেন, তিনি কলকাতার এক পোশাক কারখানায় বহাল ছিলেন। লকডাউনে সংস্থা বন্ধ হয়ে গেলে বাড়ি ফেরার জন্য ফরাক্কা পৌঁছলে তাঁকে আটকে দেয় পুলিশ। বাড়ির কাছাকাছি এসেও তাই আপাতত জাতীয় সড়কই তাঁর ঠিকানা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালদার এক জেলা পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, লকডাউনে জেলা থেকে জেলায় যাতায়াত করতে দেওয়া হবে না সাধারণ মানুষকে। ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন করছি’, জানিয়েছেন ওই পুলিশকর্তা।
এই বিষয়ে জানতে চেয়ে যোঘাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন তোলেননি মালদার জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া।
জেলার এক প্রশাসনিক আধিকারিক জানিয়েছেন, দিন দুই আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারাসত থেকে আগত মালদার মানিকচক থানা এলাকায় এক পরিযায়ী শ্রমিক করোনা পজিটিভ প্রমাণিত হওয়ার পরে এই কড়াকড়ি চালু হয়েছে।
জাঙ্গিপুরের এসডিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘আমরা সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে এই বিষয়ে কোনও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়নি। মালদা পুলিশের তরফে মুর্শিদাবাদ থেকে কাউকেই সেই জেলায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা এর সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছি।’