নবমীর রাতটা যেন ভয়াল হয়ে উঠেছিল। কারণ একদিকে তখন প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছেন অন্তঃসত্ত্বা, আর একদিকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। আকাশ কালো করে এসেছে। এই আবহাওয়ায় ছাতা হাতে করেই রাস্তায় নেমেছে বিপুল পরিমাণ মানুষজন। যাকে বলা যায়, জনপ্লাবন। এমন পরিস্থিতিতে অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে নিয়ে বেজায় বিপদে পড়ে যান পাণ্ডুয়ার জায়ের দ্বারবাসিনীর কাওসার আলির পরিবার। কারণ তখন প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছে মেয়ে। তাঁকে নিয়ে রাতেই ভাড়া করা গাড়িতে করে চুঁচূড়া ইমামবাড়া জেলা হাসপাতালের দিকে রওনা দেন তাঁরা। কিন্ত জনপ্লাবনের মাঝে হঠাৎ গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেল। তখন মাথায় হাত।
এদিকে এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভিড় ঠেলে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছনো যে কঠিন সেটা বুঝতে পেরে গিয়েছেন বৃদ্ধ। ঠিক তখনই পাশে এসে দাঁড়াল পুলিশ। তখন রাস্তায় ডিউটিতে ছিলেন পুলিশ কর্মীরা। গাড়িটি দেখতে পেয়েই নিজের গাড়িতে করে ওই অসহায় অন্তঃসত্ত্বাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিলেন স্থানীয় ফাঁড়ির ওসি। গোটা পরিস্থিতি তখন একেবারে স্বাভাবিক হয়ে গেল। টেনশন থেকে বেরিয়ে এলেন বৃদ্ধ। নবমীর রাতে পুলিশের এই মানবিক উদ্যোগের সাক্ষী থাকল হুগলির ব্যান্ডেল। এখন চুঁচূড়া ইমামবাড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা তুহিনা পারভিন। তাঁর বাবা কাওসার আলি বলেন, ‘সব পুলিশ খারাপ নয়। পুলিশ কর্মীরা এগিয়ে এসে সাহায্য না করলে মেয়েটাকে তো হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছতেই পারতাম না।’
অন্যদিকে নবমীর রাতের ওই ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধ কাওসার আলি। আর ওই অবস্থাতেই বৃদ্ধ কাওসার জানান, প্রসব যন্ত্রণা উঠেছিল মেয়ের। তখন তড়িঘড়ি গাড়ি ভাড়া করে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হই। কিন্তু পথে পড়তে হয় তীব্র যানজটে। বারেবারে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আর মেয়ের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠছিল। রাস্তায় তখন মানুষের থিকথিকে ভিড় ঠাকুর দেখার জন্য। কেমন করে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছব সেটা বুঝতে পারছিলাম না। এমন সময় ডিউটিরত থাকা পুলিশ কর্মীরা এগিয়ে আসেন। বাকিটা তাঁরাই সব করেছেন। অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের প্রাণ বাঁচিয়েছেন।
আরও পড়ুন: মোদী–মমতার শুভেচ্ছাবার্তায় জমজমাট বিজয়া দশমী, কেমন বার্তা দিলেন তাঁরা?
আর কী জানা যাচ্ছে? গোটা ঘটনা যেভাবে ঘটল সেটা একেবারে সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো বলেই মনে করছেন বৃদ্ধ কাওসার। অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে বাঁচাতে পুলিশ একদিকে যেমন ভিড় ঠেলে হাসপাতালে পৌঁছে দিল তেমন ঠায় পুজোর ডিউটিতে থাকা উর্দিধারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সেবার জন্য। এই ঘটনার সময় সামনেই ছিলেন উইনার্স বাহিনীর ইন্সপেক্টর বর্ণালী গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি গোটা বিষয়টি দেখতে পেয়ে পৌঁছলেন ব্যান্ডেল ফাঁড়ির ওসি অতনু মাজির কাছে। তারপর খবর দিতেই পুলিশেরই একটি দল ততক্ষণে রাস্তার ভিড় খালি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ওসির গাড়ি করেই ওই মহিলাকে পৌঁছে দেওয়া হল হাসপাতালে। পুলিশের এমন মানবিক উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন চন্দননগর পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি।