প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে নারীপাচার চক্র আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আসলে আর তো দু’দিন। তারপরই প্রেমের জোয়ারে ভেসে ওঠার দিন। হ্যাঁ, ভ্যালেন্টাইন ডে। আর সেটাকে হাতিয়ার করেই প্রেম দিবসের আগে প্রেমিকাকে ডেকে পাঠায় প্রেমিক। আর প্রেমিকের সেই মধুর ডাকে সাড়া দিতই মেলে বিমানের টিকিট। সেই টিকিটের মাধ্যমেই আকাশপথে উড়ে যাচ্ছিলেন প্রেমিকা। কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় প্রেমের বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়নি। বাড়ি ফিরতে বাধ্য হতে হয়েছে। মোবাইল গেম অ্যাপের দৌলতে যোগাযোগ করে এক নাবালিকাকে প্রেমের জালে ফাঁসানো হয়। সেই চক্র থেকে পুলিশের তৎপরতায় মুক্তি পায় নাবালিকা। জলপাইগুড়ির এক নাবালিকা ছাত্রীর ‘প্রেম কাহিনী’ হিন্দি সিনেমাকেও হার মানায়।
এদিকে ধূপগুড়ির বারোঘরিয়া গ্রামের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে ভিডিয়ো গেমের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে ওঠে হরিয়ানার এক যুবকের। মেয়েটির দাবি, এই প্রেমের মাস, ফেব্রুয়ারিতে সেই সম্পর্ক গাঢ় হয়। প্রপোজ ডে’তে প্রেমিক প্রেমিকাকে বলেছিল, ‘আমি শুধু তোমার তুমি’। ব্যস, তারপর প্রেমের গাড়ি দৌড়তে থাকে দুরন্ত গতিতে। এবার সামনে দাঁড়িয়ে প্রেম নিবেদনের পরিকল্পনা করা হয়। ছেলেটির পরামর্শ নিয়ে মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ হাজার টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়ে ছেলেটিকে পাঠায় নাবালিকা। প্রেমিকার টাকা দিয়ে বিমানের টিকিট কেটে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠায় প্রেমিক। এরপর পড়তে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা পৌঁছে যায় বাগডোগরা বিমানবন্দরে। দিল্লিগামী বিমানে উঠেও পড়ে।
অন্যদিকে প্রেমিকাকে প্রেমিক বলেছিল, সে অপেক্ষায় থাকবে। মুখোমুখি দেখা এবং প্রেমের প্রস্তাবের জন্য। কিন্তু মেয়ে দুপুরে বাড়ি ফিরে না আসায় চারদিকে খুঁজে পুলিশের দ্বারস্থ হয় পরিবার। অভিযোগ পেয়েই মেয়েটির মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে পুলিশ। আর যা দেখে তাতে চোখ কপালে ওঠে। সকালে মেয়েটির অবস্থান ছিল ধূপগুড়িতে। আর সন্ধ্যায় মেয়েটির ভৌগোলিক অবস্থান মাঝ–আকাশে। বিমান পৌঁছতে চলেছে নয়াদিল্লি। পুলিশ অফিসারদের মাথায় আসে পাচার চক্রের কথা। তখনই দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এবং দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ধূপগুড়ি থানার পুলিশ অফিসাররা। বিমানবন্দরেই ছাত্রীকে আটক করা হয়। কিন্তু ওই যুবকের হদিশ মেলেনি। ওই ছাত্রীকে ধূপগুড়ি নিয়ে এসে জলপাইগুড়ির একটি আবাসিক হোমে রাখা হয়।
আরও পড়ুন: কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীদের জালে উঠল দেদার ইলিশ, সরস্বতী পুজোয় উঠবে পাতে
এছাড়া ওই প্রেমিক যুবকের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রেমের অভিনয় করা যুবকের প্ররোচনায় এত বড় কাণ্ড ঘটিয়ে বসেছে গ্রামের সরল মেয়েটি। প্রথমে মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানো। তারপর টাকা ছেলেটির অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা। আর নীরবে দিল্লিগামী বিমানে উঠে বসা। দিল্লিতে বসেই মেয়েটিকে মনিটরিং করছিল ছেলেটি। তাই বিমান থেকে নামার পর প্রেমিক না প্রতারকের মুখোমুখি হতো মেয়েটি কেউ জানে না। ধূপগুড়ি থানার আইসি অনিন্দ্য ভট্টাচার্য বলেন, ‘মেয়েটি এখন ট্রমার মধ্যে আছে। একটু স্বাভাবিক হলেই আবার তার সঙ্গে কথা বলা হবে। ছেলেটির মোবাইল নম্বর নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’