গ্রাহকের কাছ থেকে ২ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে একটি ব্যাঙ্কের প্রাক্তন মহিলা ম্যানেজারকে গ্রেফতার করল পুলিশ। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেই ভিন রাজ্যে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন ওই ম্যানেজার। কখনও উত্তর প্রদেশ, আবার কখনও বিহার, কখন আবার এরাজ্যে গা ঢাকা দিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। অবশেষে ডেলিভারি বয়ের ছদ্মবেশে ওই প্রাক্তন ম্যানেজারকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ। ধৃত প্রাক্তন ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের নাম গুঞ্জন সিং। তিনি কলকাতার বড়বাজারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ছিলেন। সেই সময় বড়বাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২ কোটি টাকা প্রতারণা করেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়ার বালিতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আত্মগোপন ছিলেন ওই প্রাক্তন মহিলা ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। অনলাইনে খাবার অর্ডার করেছিলেন তিনি। এরপর ডেলিভারি বয়ের ছদ্মবেশে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জানা গিয়েছে, প্রতারণার ঘটনাটি ঘটেছে বছর দুয়েক আগে। সেই সময় ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ছিলেন গুঞ্জন। এদিকে, হাওড়ার এক কাপড় ব্যবসায়ীরও অ্যাকাউন্ট ছিল ওই ব্যাঙ্কে। সেই সূত্রেই গুঞ্জন ওই ব্যবসায়ীকে আকর্ষণীয় স্কিমের প্রলোভন দেখিয়ে দু কোটি টাকা লগ্নি করতে বলেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন ওই টাকা লগ্নি করলে অল্প দিনের মধ্যেই প্রচুর টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। সেটি ওই ব্যাঙ্কের নতুন স্কিম বলে তিনি ব্যবসায়ীকে জানিয়েছিলেন। ব্যবসায়ীর বিশ্বাস অর্জন করার জন্য তাঁকে বেশ কিছু নথিও দেখিয়েছিলেন প্রাক্তন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। সেই মতোই ওই ব্যবসায়ী বেশি টাকা আয়ের আশায় ২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। তাঁকে অন্য একটি অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা করতে বলা হয়েছিল। টাকা জমা করার পর ওই ব্যবসায়ীকে একটি শংসাপত্র দিয়েছিলেন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। কিন্তু, টাকা তুলতে গিয়ে মাথায় হাত ব্যবসায়ীর। তিনি ব্যাঙ্কের বর্তমান ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন ব্যাঙ্কে ওই ধরনের কোন স্কিমই ছিল না। তাছাড়া তাঁকে যে শংসা পত্র দেওয়া হয়েছিল সেটিও ভুয়ো ছিল।
এরপরেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যবসায়ী। একইসঙ্গে বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষীয় জানতে পারে দীপক কেওট নামে এক ব্যক্তির সহযোগিতায় এই প্রতারণা করেছিলেন প্রাক্তন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। দীপকও ওই ব্যাঙ্কের কর্মী ছিলেন। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই দীপককে চাকরি চলে যায়। এরই মধ্যে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে, অভিযুক্ত প্রাক্তন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার পালিয়ে যান।
মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ জানতে পারে কখনও উত্তরপ্রদেশ এবং কখনও বিহারে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন ওই মহিলা। পুলিশ জানতে পারে, সম্প্রতি কয়েক মাস ধরেই হাওড়ার বালির একটি ফ্ল্যাটে থাকছিলেন ওই ব্যাঙ্ক ম্যানেজার এরপর তদন্তে পুলিশ জানতে পারে যে ওই মোবাইল নম্বর থেকে অনলাইনে খাবারের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। সেই সূত্র ধরেই বালির ফ্ল্যাট থেকে প্রাক্তন ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে আদালতে তোলা হলে ২২ জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।