সোনার ঠাকুর বিক্রির নামে ক্রেতাদের কাছ থেকে লুট করে নেওয়া হচ্ছিল সর্বস্ব। সেই অভিযোগের তদন্ত নেমে এই চক্রের মূল পান্ডাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ক্রেতা সেজে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই মূল পান্ডাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনাটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি এলাকায়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল। তবে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তাদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: সোনার নাম করে লোহার মূর্তি বিক্রি, ব্যবসায়ীর সঙ্গে ৫ লক্ষ টাকার প্রতারণা
কীভাবে চলত এই প্রতারণা চক্র?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই চক্র প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোনার মূর্তি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিত। তারপর তাদের সঙ্গে কোনও ক্রেতা মূর্তি কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করলে বিশ্বাস অর্জনের জন্য ঠাকুরের একটি অংশ সোনার দোকানে পরীক্ষা করা হত। তা দেখার জন্য ক্রেতাকে ডাকা হত। এরপর সোনার দোকান থেকেও জানানো হত সেটি সোনার। তারপরেই ক্রেতাকে লুটের ফন্দি করত এই চক্র। পরীক্ষার পর ক্রেতা মূর্তি কিনতে রাজি হলেই তাকে নির্দিষ্ট দিনে টাকা সহ নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে বলত এই চক্র। সেইমতো ক্রেতা আসলেই তাঁর কাছ থেকে সর্বস্ব লুট করে পালিয়ে যেত এই চক্র। মূলত এইভাবেই তারা লুট বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। সাধারণত সুন্দরবন অঞ্চলে প্রচুর মৎস্যজীবী রয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বাঘের শিকার হন। এই অবস্থায় মৎস্যজীবীদের ঠাকুরের উপর আস্থা অনেক বেশি। সেই কারণে অনেকেই জীবন বাঁচাতে সোনার ঠাকুর কিনতেন। আর এইভাবে প্রতারণার জালে ফেলে তাঁদের সর্বস্ব লুট করত এই চক্র।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই এলাকায় ২০২১ সালে এই ধরনের প্রতারণা চক্রান্ত অত্যন্ত সক্রিয় ছিল। সেই সময় তদন্ত নেমে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছিল। ফলে কিছু সময়ের জন্য এই প্রতারণা চক্র বন্ধ ছিল। ইদানিং ফের সেই চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আগে এই ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটতো। তবে বর্তমানে কমেছে।
এই প্রতারণা চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছিলেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে অনেকেই থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তারপরই ক্রেতা সেজে পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়ায় এই চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা মূর্তি কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করে। সেইমতোই পুলিশকে মূর্তি কেনার জন্য আসতে বলেছিল ওই প্রতারণা চক্র। এরপর কুলতলি থানার আইসি অর্ধেন্দু শেখর দে’র নেতৃত্বে বুধবার দুপুরে জামতলা মোড়ে পৌঁছয় পুলিশ। সেখানেই হাতেনাতে মূল পান্ডাকে ধরে ফেলে পুলিশ ধৃতের নাম তালিমুল শেখ। তার কাছ থেকে একটি পিস্তল, কার্তুজ, বাইক এবং দুটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। এই চক্রের সঙ্গে আরও কারও জড়িত তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ বিষয়ে কুলতলির বিধায়ক গনেশ চন্দ্র মণ্ডল জানিয়েছেন, ‘আগে এই ঘটনা অনেক বেশি ছিল। তবে এখন তা কমেছে পুলিশকে আইন মেনে পদক্ষেপ করতে বলেছি। ’