উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে গত ১৭ দিন ধরে আটক ৪১ জন শ্রমিক। আজ, মঙ্গলবার একে একে ‘র্যাট হোল’ প্রক্রিয়ায় উদ্ধার করা হল সকলকে। বাংলার তিন শ্রমিক সেখান থেকে উদ্ধার হন। কোচবিহারের মানিক তালুকদার, হুগলি জেলার সৌভিক পাখিরা এবং জয়দেব প্রামাণিক আছেন সেই তালিকায়। এই খবর পৌঁছে যায় বাংলার শ্রমিকদের পরিবারে। উৎকণ্ঠার যেন অবসান হয়। বাংলার শ্রমিকরা যেমন ফোন করতে থাকেন বাড়িতে, তেমন পরিবারের সদস্যরাও ফোন করে খবর নিতে শুরু করেন। তখন দু’দিকেই আবেগঘন মুহূর্ত। চোখের জলে ভিজছে উত্তরাখণ্ড এবং বাংলার মাটি।
ঠিক দুটি শব্দ—‘ভাল আছি’। আজ রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ এল সেই ফোন পুরশুড়ার পাখিরা পরিবারে। ছেলের কন্ঠস্বরের অপেক্ষা করছিলেন মা। তাই টানেল থেকে বেরিয়েই পুরশুড়ার সৌভিক পাখিরা ফোন করেন মা’কে। আর ফোন পেয়ে যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে মায়ের। সৌভিক তাঁর মাকে এই দুটি শব্দই বললেন, ‘ভাল আছি’। তার পর তো শুধুই চোখের জল বয়ে গেল। আর মা কী বললেন? ছেলের সঙ্গে ১৭ দিন পরে মোবাইলে কথা। প্রথম প্রশ্নই করে তাঁর মা জানতে চাইলেন—‘চেক আপ করিয়েছো তো?’ ৪১ জন শ্রমিককেই ইতিমধ্যে হাসপাতালের পথে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই হবে চিকিৎসা অর্থাৎ চেক আপ।
এদিকে জয়দেব কেমন রয়েছেন? জয়দেব অর্থাৎ জয়দেব প্রামাণিক। তিনি হুগলির নিমডাঙ্গির বাসিন্দা। সৌভিকের মতো জয়দেবও গত ১৭ দিন ধরে উত্তরকাশীর সিল্কয়ারার সুড়ঙ্গে আটকে ছিলেন। আজ তিনিও উদ্ধার হন। তাঁর কথাও সৌভিককে জিজ্ঞাসা করলেন তাঁর মা। মুখে হাসি রেখে পাল্টা প্রশ্ন মায়ের, ‘সকলকে একসঙ্গেই বের করেছে?’ এত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। তাই শুধু সৌভিক জানান, জয়দেব রয়েছেন তাঁর সঙ্গেই। দু’জনে একসঙ্গেই এখন হাসপাতালের দিকে রওনা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: এসএসসি’র ডিজিটাল রেকর্ড নিয়ে নয়া মোড়, চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেল সিবিআই
অন্যদিকে সৌভিকের মা সংবাদমাধ্যমে জানান, তিনি গত কয়েকদিন ধরে শুধু প্রার্থনা করেছেন বাবা তারকনাথের কাছে। সুস্থ শরীরে ফিরে সৌভিক যাতে তারকনাথের মাথায় জল ঢালেন। আর ফোন রাখার আগে সৌভিককে তাঁর মা বললেন, ‘তুমি জয়ী হয়ে ফিরছ বাবা।’ ফোনে সৌভিক জানান, ৪১ জনই সুস্থ আছেন। প্রথম দু’জন শ্রমিককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। বিজয় হোরো এবং গণপতি হোরোর উদ্ধারের খবরে আশার আলো ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। বাড়তে থাকে উদ্ধার হওয়া শ্রমিকের সংখ্যা। তারপর সংখ্যাটা পৌঁছে যায় ১০, ১৫ এবং ১৭’তে। আধ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার হন ৪১ জন শ্রমিকই। উদ্ধার হওয়ার পরই চিকিৎসকরা তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যও। এদিন এক্স হ্যান্ডেলে পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘আমাদের লোকেদের সাহায্য করার জন্য উত্তরকাশীতে দল পাঠিয়েছি। আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার এবং নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে এই দল। নেতৃত্ব দিচ্ছেন নয়াদিল্লি রেসিডেন্ট কমিশনারের আধিকারিক রাজদীপ দত্ত।’