জানুয়ারি মাসের ৩১ তারিখ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং অমর্ত্য সেনের জমি মামলার রায়। ঠিক তার প্রাক্কালে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে নজিরবিহীন আক্রমণ করলেন বিশ্বভারতীর আইনজীবী। কবিগুরুর সম্পত্তি নেবেন যদি তিনি ভেবে থাকেন, তাহলে সেটা নির্লজ্জতা ও অসভ্যতামি বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবী। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী সুচরিতা বিশ্বাস এই ভাষাতেই আক্রমণ করেন ভরা এজলাসে। শনিবার সিউড়ি জেলা আদালতের বিচারক সুদেষ্ণা দে চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে বিশ্বভারতী ও অমর্ত্য সেনের জমি বিবাদ মামলার শুনানি ছিল। এদিন দু’পক্ষের সওয়াল–জবাব চলে। বিচারক পরবর্তী শুনানির জন্য ৩১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
এদিকে বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে ১৩ ডেসিমেল জমি ফেরত চেয়ে করা হয় মামলা। এই নিয়ে শনিবার ছিল এই মামলার শুনানির শেষ দিন। আগামী ৩১ জানুয়ারি এই মামলার রায় ঘোষণা করবে আদালত। কিন্তু রায় ঘোষণার আগেই এভাবে অমর্ত্য সেনকে আক্রমণ করলেন বিশ্বভারতীর আইনজীবী সুচরিতা বিশ্বাস। যদিও বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সঞ্জয়কুমার মল্লিক বলেন, ‘অমর্ত্য সেনকে অপমান করার কোনও নির্দেশ আমি দিইনি। আর আমার সঙ্গে আইনজীবীর সরাসরি আজ পর্যন্ত কোনও কথা হয়নি।’ তবে বিশ্বভারতীর আইনজীবী বলেন, ‘ওঁর শুরু থেকেই সব মিথ্যা। অর্থনীতিতে কোনওদিন নোবেল দেওয়া হয় না। ওটা ব্যাঙ্ক অব সুইডেন দিয়েছিল। সেটাকে উনি নোবেল বলে চালাচ্ছেন। ভারতবর্ষে তাঁর কী অবদান আছে? একেবারে জিরো! উনি যদি মনে করেন গুরুদেবের সম্পত্তি নেবেন তা নির্লজ্জতা, অসভ্যতামি।’
অন্যদিকে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’র সীমানাবর্তী জমি নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। বিশ্বভারতীর দাবি, মোট ১.২৫ একর জমি লিজ দেওয়া হয় অমর্ত্য সেনের প্রয়াত বাবা আশুতোষ সেনকে। তাই ১৩ ডেসিমেল জমি অমর্ত্য সেন ‘জবরদখল’ করে রয়েছেন। বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। যদিও ১.৩৮ একর জমিই অমর্ত্য সেনের নামে মিউটেশন করা হয়েছে। অমর্ত্য সেনের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি শুধু আদালতে দাঁড়িয়ে জজসাহেবকে বললাম, অমর্ত্য সেনের অবদান এভাবে বলে শেষ করা যাবে না। যদি সহজ উদাহরণও দিই তো আজকের দিনের মিড–ডে মিল ভাবনার কথা বলা দরকার।’
আরও পড়ুন: ‘বিএনপি হচ্ছে একটা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন’, প্রধান বিরোধী দলকে তোপ শেখ হাসিনার
এছাড়া অমর্ত্য সেন সম্পর্কে বিশ্বভারতীর আইনজীবীর মন্তব্যে নানা মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। একজন নোবেলজয়ীকে এই ভাষায় আক্রমণ করা শুধু তাঁকে অপমান করা নয়, সমগ্র বাঙালি জাতির অপমান বলছেন অনেকেই। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সহ–সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘এমন মন্তব্য নিয়ে কথা বলতেও রুচিতে বাধে। তাঁর না জানি কত শয়ে শয়ে ছাত্রছাত্রী গোটা বিশ্বে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। বাঙালি যে কাঁকড়ার জাত সেটা বোঝা যাচ্ছে। না হলে এই আইকন বাঙালিকে নিয়ে এক বাঙালি আইনজীবী এমন মন্তব্য করেন কী করে?’