নারদ মামলায় প্রথম থেকেই ‘বিক্ষোভ’ অস্ত্র ব্যবহার করে আসছে সিবিআই। মঙ্গলবার তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়ল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তবে একইসঙ্গে সিবিআইয়ের আইনজীবী তথা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার সওয়ালের ভূয়সী প্রশংসাও করল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, 'এটা উজ্জ্বল যুক্তি। নিজেকে পড়ুয়া মনে হচ্ছে।'
মঙ্গলবারের শুনানিতে নারদ মামলা ভিন রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য সওয়াল করেন সিবিআই। মেহতা প্রশ্ন তোলেন, নিম্ন আদালতে শুনানির সময় বাইরে যে মানুষের ভিড় হয়েছিল, তাতে বিচারক সঠিকভাবে তাঁর বিচক্ষণতার প্রয়োগ করতে পারেননি বলে কি মনে হচ্ছে? তিনি বলেন, ‘আমরা যে পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে কথা বলছি, তা বিচারকের ব্যক্তিগত মতের কারণে নয়। বরং আদালতের বাইরে জমায়েতের কারণে যে ভয় তৈরি হয়েছিল, তার কথা বলছি।’ সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘বিচারক জানতেন যে জনতা ছিল। বিচারক হয়তো সেই জমায়েতের ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হননি। কিন্তু একজন স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষকের কি মনে হতে পারে যে বিষয়টির ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ শুনানি হয়নি? বিচারক প্রভাবিত হয়েছিলেন, নাকি হননি, সেটা বিষয় নয়। কিন্তু প্রাসঙ্গিক হল যে একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি কি মনে করছেন, সেখানে পক্ষপাতিত্বের মতো বিষয় ছিল?’
সেই সওয়ালের প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের তরফে জানানো হয়, দেশের সংবিধানে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ এবং জমায়েতে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কার্যনির্বাহী কাজকর্মের বিরুদ্ধেও সেই অনুমতি আছে। তাহলে কীভাবে সাধারণ মানুষের মনে ধারণা তৈরি হবে যে এরকম বিক্ষোভের দ্বারা বিচারব্যবস্থা প্রভাবিত হবে? বিচারপতি সৌমেন সেন বলেন, ‘ভার্চুয়ালি শুনানি হয়েছিল। ওঁনার (বিচারক) কাছে তথ্য ছিল না যে বাইরে কেউ ছিল। তা কি বিচারককে প্রভাবিত করতে পারে?’
যদিও নিজের যুক্তিতে অনড় থেকে মেহতা বলেন, ‘বিচারক হয়তো জানতেন না। বিচারক জানতেন কিনা এবং পক্ষপাতী ছিলেন কিনা, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিষয়টা হল যে সম্যক জ্ঞান থাকা এক সাধারণ মানুষ শুনানির বিষয়ে কী ভাববেন।’ তা নিয়ে বিচারপতি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘যদি তাই হয়, তাহলে আপনার মক্কেল তো শুনানিতে স্থগিতাদেশ চাইতে পারত।’
মেহতা দাবি করেন, আদালতে শুধুমাত্র জামিনের শুনানি হয়েছে। তা হওয়া উচিত ছিল না। তাছাড়া জমায়েতের বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত এবং অভিযুক্তরা তাতে ফায়দা পেয়েছেন। জামিন পাওয়ার পরেই আদালতের বাইরের জমায়েত ফাঁকা হয়ে যায়। অভিনেতাদের ক্ষেত্রে যে জমায়েত হয়, তা পূর্বপরিকল্পিত হয় না। স্বষোঘিত ধর্মগুরুদের ক্ষেত্রে তা ৫০ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু অতীতে পরিকল্পিত গুন্ডামি সাক্ষী থেকেছে পশ্চিমবঙ্গ। এটাই একমাত্র ঘটনা হয়। পুলিশ কমিশনারকে যখন গ্রেফতার করতে চেয়েছিল সিবিআই, তখনও একই ঘটনা ঘটেছিল। যখনও শাসক দলের ঘনিষ্ঠ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন, তখনই প্রতিবাদ জানিযে রাস্তায নেমে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সিবিআইয়ের আইনজীবীর সওয়ালের শেষে মঙ্গলবারের মতো শুনানি শেষ হয়ে যায়। প্রায় তিন ঘণ্টা চলে শুনানি। আগামিকাল (বুধবার) আবার সকাল ১১ টা ৩০ মিনিটে শুনানি শুরু হবে।