হোমটাস্ক দিয়েছিলেন তিনি। কতটা হয়েছে? বঙ্গ–বিজেপির সত্যিকারের সাংগঠনিক হাল–হকিকত খতিয়ে দেখতে অগস্ট মাসেই রাজ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রকাশ্য সমাবেশ করার কথা আছে। দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলতে হয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির ফল ভাল হয়েছে। পাশাপাশি পিঠ চাপড়াতে হয়েছে সুকান্ত–শুভেন্দুর। কিন্তু অমিত শাহ নিজেও জানেন এই ফলাফল দিয়ে লোকসভা নির্বাচনের লক্ষ্যপূরণ সম্ভব নয়। তাই বাংলায় এসে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে জরুরি সাংগঠনিক বৈঠক করবেন বলে সূত্রের খবর। গতকাল শুক্রবার নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বঙ্গ–সফরের কথা জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরাট কোনও সাফল্য পায়নি বিজেপি। বরং নিজেদের গড় বলে যে জেলাগুলিকে দাবি করা হয় সেগুলিতে গোহারা হেরেছে। তার মধ্যে রয়েছে উত্তরবঙ্গও। উলটে দেখা গিয়েছে বিরোধী দলনেতা ৩৫৫ কার্যকর করার জন্য সন্ত্রাসের পরিকল্পনা করছেন। যে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য ডেরেক ও’ব্রায়েন। এখন উলটে এই ফলাফলের জন্য তৃণমূলের সন্ত্রাসকে ‘ঢাল’ করা হচ্ছে। যেখানে তৃণমূলেরই বেশি কর্মী মারা গিয়েছেন। কিন্তু বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এমন ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হয়নি। আর তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলপ্রকাশের তিনদিন পর শুক্রবার হঠাৎ সুকান্ত মজুমদারকে নয়াদিল্লিতে তলব করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ঠিক কী বলছেন সুকান্ত? সুকান্ত–অমিত শাহের এই সাক্ষাৎ–পর্বে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে হাজির ছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এই বৈঠক শেষ করে সুকান্ত মজুমদার সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘হিমন্তজির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বাংলার বহু বিজেপি নেতা–কর্মী অসমে আশ্রয় চেয়েছেন। বিজেপির জয়ী প্রার্থীদের জোর করে অন্য দলে যোগদানের চেষ্টা চলছে। রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়েই অমিত শাহজিকে রিপোর্ট দিয়েছি।’ রাজ্যে ৩৫৫ কিংবা ৩৫৬ ধারা কার্যকর নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেছেন, ‘বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে। বাংলার যা পরিস্থিতি, তাতে যে কোনও মুহূর্তেই সেটা জারি হতে পারে।’
আরও পড়ুন: রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করলেন রাজ্যপাল, ধোঁয়াশা ম্যাকাউটে
আর কী জানা যাচ্ছে? পঞ্চায়েত নির্বাচনের তিনদিন পর একটি টুইট করেন অমিত শাহ। সেখানে সুকান্ত–শুভেন্দুকে অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন, ‘বিজেপির গত নির্বাচনের তুলনায় আসন সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। সন্ত্রাসেও বিজেপির দারুণ ফল ঠেকাতে পারেনি। বিজেপির উপর সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ছে।’ পাল্টা অমিত শাহকে কটাক্ষ করে ডেরেক ও’ ব্রায়েন টুইটে লেখেন, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা ও দেশের শান্তিরক্ষার দায় আপনার উপরই বর্তায়। অথচ সেটা না করে নির্লজ্জের মতো ভুয়ো ভোটপ্রাপ্তির হিসেব দিচ্ছেন! বিজেপির ভোটপ্রাপ্তির হার অনেক কমেছে। বাংলার মানুষ আপনাদের আবারও বাতিল করল। মণিপুর, জম্মু–কাশ্মীরে কী হচ্ছে? মানবতা–ভদ্রতা আপনার অভিধানে নেই।’ আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘৩৮ যদি ২২ সংখ্যায় নামে, সেটা বাড়ল না কমল? অমিত শাহ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওঁর যদি মনে হয় বিজেপির ভোট বেড়েছে, তাহলে বেড়েছে! এমন লোক যদি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন, যিনি মনে করেন ২২, ৩৮ সংখ্যার থেকে বেশি, তাহলে দেশের অবস্থা কেমন বুঝতে পারছে সবাই।’