হোম মিনিস্টার বলে কথা। তাঁকে সুবিধা না দিয়ে বাইরের কাউকে সুযোগ–সুবিধা দেওয়া যায়! গৃহকর্ত্রীই তো হোম মিনিস্টার। তাঁকে চটালে তো সংসারে অশান্তি অবশ্যম্ভাবী। ডান হাতের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই নিজের স্ত্রীকেই আগেভাগে স্কুলের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন এসএসসি’র পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ারম্যান তথা স্বামী। স্কুল সার্ভিস কমিশনের পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এমনই মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। আর তাই অবিলম্বে তাঁকে বহিষ্কার করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। একইসঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকারকে হাজির হওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার তাঁকে সশরীরে আসতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এদিকে আজ, সোমবার এই মামলার শুনানিতে অনেকে হাসাহাসি করেন। নিজের স্ত্রীকে এত ভয়। তার জন্য দুর্নীতিও। যদিও এসব কথায় কর্ণপাত করেননি বিচারপতি। তবে রাজ্য সরকারের উদ্দেশে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু বলেন, ‘স্কুল সার্ভিস কমিশনের পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ারম্যান শেখ সিরাজউদ্দিনকে অবিলম্বে বহিষ্কার করুন। তাঁকে অবিলম্বে হেফাজতে নিন। মারাত্মক অভিযোগ আছে। প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও নিজের স্ত্রীকে চাকরি দিয়েছেন। দ্রুত পদক্ষেপ করুন।’ এসএসসি’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকারকেও হাজিরার নির্দেশ দেন বিচারপতি। মুর্শিদাবাদের গোথা হাইস্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় এই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
অন্যদিকে ২০১১ সালে পরীক্ষা দেন শেখ সিরাজউদ্দিনের স্ত্রী জাসমিন খাতুন। ২০১৫ সালে সেই প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়। ২০১৯ সালে সেই মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে জাসমিন খাতুনকে চাকরি দিয়ে দেন শেখ সিরাজউদ্দিন। স্ত্রী হওয়ায় তা দ্রুত হয়ে যায়। কেউ বুঝতে পারবে না ভেবেছিলেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ারম্যান শেখ সিরাজউদ্দিন। কিন্তু সেটাই কাল হয়। খোদ সিরাজউদ্দিন মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে নিজের স্ত্রীকে চাকরি দেন বলে অভিযোগ ওঠে। মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলাতেই আজ এই নির্দেশ দেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।
আরও পড়ুন: ‘আমরা ধর্মকে সামনে রেখে রাজনীতি করি না’, তারপর থমকে গেল অভিষেকের কথা
এখন নিয়োগ দুর্নীতিতে তোলপাড় রাজ্য–রাজনীতি। তার উপর আবার একটা দুর্নীতি ধরা পড়ল। যদিও এটায় সরকার জড়িত নয়। তবু বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক মামলার তদন্ত চালাচ্ছে ইডি–সিবিআই। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে। শিক্ষা দফতরেরও বেশ কিছু কর্তাব্যক্তি ইতিমধ্যেই জেলে গিয়েছেন। নিয়োগ দুর্নীতিতে নানা জায়গায় তল্লাশি করছে ইডি। সেখানে এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর। এবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে অনৈতিক পথে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে কড়া নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।