ঘড়িতে ভোর ৫টা। বৃষ্টিস্নাত কলকাতায় তখন অন্ধকার। কিন্তু সিআরপিএফ জওয়ানদের প্রস্তুতি দেখা গেল নিজাম প্যালেসের সামনে। কেন এমন তৎপরতা? তারপরই দেখা গেল, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য আলিপুরের কমান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অনুব্রত মণ্ডলকে। তবে হাসপাতালের ভিতরে যাওয়ার সময় তাঁর দাপুটে মেজাজ দেখা গিয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার করিয়েই আসানসোলের পথে অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে রওনা হবে সিবিআই। কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়াও কলকাতা পুলিশের টিমকেও দেখা গেল নিজাম প্যালেসের সামনে। একই ছবি আলিপুরে কমান্ড হাসপাতালেও।
অনুব্রতর কী শরীর খারাপ হয়েছে? আজ, শনিবারই শেষ হচ্ছে অনুব্রত মণ্ডলের ১০ দিনের সিবিআই হেফাজত। আজ আবার আসানসোলের সিবিআই আদালতে তোলা হবে তাঁকে। গত ১০ দিন ধরে তাঁকে জেরা করে বিভিন্ন তথ্য জেনেছে সিবিআই। এই কয়েকদিনে একাধিক তথ্য প্রমাণও সিবিআই হাতে পেয়েছে বলে সূত্রের খবর। এই পরিস্থিতির মধ্যেই বীরভূমের কালিকাপুরের অখ্যাত এক চালকলে শুক্রবার গিয়েছিল সিবিআই। ভোলে ব্যোম রাইস মিল। সেই মিলের ভিতর তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় অন্যের মালিকানাধীন পাঁচটি দামি গাড়ি, একটি মোটরবাইক এবং আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি। এই তথ্য আজ আদালতে পেশ করা হতে পারে।
কী বলছেন অনুব্রত মণ্ডল? শনিবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতা তুঙ্গে উঠেছে। নিজাম প্যালেস থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় কমান্ড হাসপাতালে। সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে তাঁর। নিজাম থেকে বেরনোর সময় সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি তদন্তে সহযোগিতা করেছেন? অনুব্রত মণ্ডল উত্তরে বলেন, ‘১০০ বার।’ অনুব্রত মণ্ডলকে নিজেদের হেফাজতে চাইতে পারে সিবিআই। গরু পাচারের টাকার সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের কোনও যোগ আছে কি না, তাঁর বিপুল সম্পত্তির টাকার উৎস কি? জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।
উল্লেখ্য, এএনএম অ্যাগ্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির খোঁজ পায় সিবিআই। রেজিস্ট্রার অব কোম্পানিজের (আরওসি) কাছ থেকে সেটির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কোম্পানির ডিরেক্টর পদে রয়েছেন অনুব্রত–কন্যা সুকন্যা মণ্ডল। আর সেই সংস্থারই আওতাধীন এই ভোলে ব্যোম রাইস মিল। ওই মিলের জমির দলিল জোগাড় করে তদন্তকারী সংস্থা। তাতে দেখা যায়, অনেকদিন আগেই প্রায় ৪৫ বিঘা জমির উপর সেটি তৈরি হয়েছে। আগে এই জমিতে পাশাপাশি দু’টি পৃথক মালিকানার মিল ছিল। ২০১২ সাল নাগাদ প্রায় সাত কোটি টাকা দিয়ে এএনএম অ্যাগ্রোর নামে সে দু’টি কেনা হয়। যাবতীয় নথি হাতে নিয়ে সেখানে হানা দেন তদন্তকারীরা।