সন্তান প্রসবের পর মাকে ভুল গ্রুপের রক্ত দিয়ে বিপাকে নার্সিংহোম। এই সংক্রান্ত একটি মামলায় নয় বছর পর নার্সিংহোমকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। গাফিলতির দায়ে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির ওই নার্সিংহোমকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। এর পাশাপাশি আবেদনকারীর মামলা খরচ হিসেবে নার্সিংহোমকে আরও ২০ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে ১ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা, খারিজ হল ৭ বছর পর
ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ঘোলার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ রায়চৌধুরী। তাঁর দাবি ছিল, প্রসব যন্ত্রণা ওঠায় তিনি স্ত্রীকে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করেছিলেন। কিন্তু, সন্তান প্রসবের পর তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। নার্সিংহোম থেকে প্রসেনজিৎবাবুকে জানানো হয় এ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত লাগবে। সেই মতোই তিনি এ পজিটিভ গ্রুপের ২ ইউনিট রক্ত জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু, তারপরের দিন স্ত্রীকে দেখতে গিয়ে তিনি দেখেন এ পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে তাঁকে দেওয়া হচ্ছে বি পজিটিভ গ্রুপের রক্ত। স্ত্রী ঠান্ডায় কাঁপছেন। সেই সময় তিনি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তখন রক্ত পরিবর্তন করে আবার এ পজিটিভ রক্ত দেওয়া হয়। পরে সুস্থ হয়ে স্ত্রী ছাড়া পান। কিন্তু, ভুল গ্রুপের রক্তের জন্য প্রাণহানি ঘটতে পারত। এমনই আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু কোনও সাড়া না পাওয়ায় তিনি ২০১৪ সালে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন।
সেই সংক্রান্ত মামলার রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত নার্সিংহোমের গাফিলতি খুঁজে পায়। তার ভিত্তিতে মামলাকারীকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যদিও মামলা চলাকালীন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ নিজেদের গাফিলতি অস্বীকার করেছিল। তাদের তরফে দাবি করা হয়, ওই প্রসূতিকে ভুল রক্ত দেওয়া হয়নি। তাছাড়া ভুল রক্ত দেওয়ার রোগী ঠান্ডা কাঁপছিলেন সে কথা ঠিক নয়। অ্যানাস্থেশিয়ার কারণে ওই প্রসূতি কাঁপছিলেন।
যদিও মামলাকারী দাবি করেন, যে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ নিজেদের গাফিলতির দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পাশাপাশি নথিপত্র খতিয়ে দেখে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। সেখানে আদালত দেখতে পায় যে বেড হেড টিকিটের পিছনে স্পষ্ট লেখা ছিল মিস ম্যাচড ব্লাড ট্রান্সফিউশন। আর সেই কারণে প্রসূতির জ্বর এসেছিল। এর ফলে প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। সেই কারণে গাফিলতির দায়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করে আদালত।