নদীয়ার রানাঘাট মহাকুমাতে অবস্থিত গাংনাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। আশেপাশের প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওপর কম বেশি নির্ভরশীল। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো থাকলেও চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র একজন। তাও আবার তিনি সপ্তাহে কয়েকটা দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসেন মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতলে ২৪ ঘণ্টার ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের দাবিতে সম্প্রতি স্থানীয়রা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। মামলার ভিত্তিতে কি কারণে সেখানে চিকিৎসক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না তা রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কম্প্রিহেনসিভ রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে কলকাতা হাইকোর্ট।
মামলাকারীদের আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ রায় চৌধুরী জানান, এলাকার মানুষদের চিকিৎসার জন্য ১৯৬৫ সালে হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছিল। মোটামুটি ২০০০ সাল পর্যন্ত হাসপাতালে পরিষেবা ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু, তারপর থেকেই বেহাল অবস্থা হয়ে ওঠে পরিষেবার। ফলে কোনও বিপদে পড়লেই প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দূর-দূরান্তে যেতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এই সমস্যার সুরাহার জন্য স্থানীয়রা বহু দফতর ঘুরে বেরিয়েছেন। প্রায় জুতো ক্ষয়ে যাওয়ার অবস্থা। কিন্তু, তারপরেও তাদের সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি।
স্থানীয় বিডিও থেকে শুরু করে জেলাশাসক, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং স্বাস্থ্য দফতরে বারংবার আবেদন জানিয়েও কাজ হয়নি ।
এলাকাবাসীদের আশঙ্কা কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়লে সে ক্ষেত্রে তারা হাসপাতলের পরিষেবা না পেয়ে আরও সমস্যায় পড়বেন। তাই জরুরি ভিত্তিতে সেখানে ২৪ ঘণ্টার জন্য চিকিৎসক নিয়োগের আরজি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন স্থানীয় বাসিন্দা প্রিয়ব্রত ঘোষাল। সেই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের কাছে হাসপাতালের কেন এমন দশা তা জানতে চান।
যদিও সরকারি কৌঁসুলি জানান, হাসপাতালে একজন চিকিৎসক রয়েছেন এবং সেখানে থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধও দেওয়া হয়। কিন্তু, চিকিৎসক থাকলেও তিনি সেখানে ২৪ ঘণ্টার জন্য থাকেন না। সপ্তাহে কয়েকটা দিন কয়েক ঘণ্টার জন্য তিনি হাসপাতালে থাকেন বলে আদালতে জানান মামলাকারীদের আইনজীবী। এই পর্যায়ে বর্তমানে হাসপাতালে কী কী সুবিধা দেওয়া হচ্ছে? ২৪ ঘণ্টা ডাক্তার নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকারের বক্তব্য কী? এবং কেন তা করা হচ্ছে না? কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের কাছে তা জানতে চেয়েছে। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার মধ্যে এই রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।