সেদিনও তাঁরা একসঙ্গে চাঁদ দেখেছিল। হাত বাড়িয়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছিলেন একে অপরকে। আর আজ যখন চরম বিপদ তখন একজনের বাড়ানো সাহায্যের হাত অন্যজন ধরলেন না। বরং মুখ ফিরিয়ে নিলেন। হ্যাঁ, তাঁরা পার্থ চট্টোপাধ্যায়–অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। আজ জেলে বসেই পার্থ সাহায্যের হাত অর্পিতার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সাহায্যের হাত ধরার পরিবর্তে মুখ ফিরিয়ে নিলেন অভিমানী অর্পিতা। প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আর আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে রয়েছেন বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। তাঁদের ভৌগোলিক অবস্থানের দূরত্ব ৫০০ মিটার। সূত্রের খবর, এই দূরত্ব মেনে নিয়ে জেলের কষ্টকে আলিঙ্গন করেও অর্পিতার জন্য চিন্তা করছেন প্রাক্তন মন্ত্রী। এমনকী তাঁর জন্য আইনি সাহায্যের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিজের আইনজীবীকে অর্পিতার জন্য নিযুক্ত করতে চেয়েছেন।
ঠিক কী করেছেন পার্থ? সূত্রের খবর, পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজের আইনজীবীকে দিয়ে এই সাহায্যের বার্তা পাঠিয়েছেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে। আলিপুর সংশোধানাগারে বসে সেই কথা জানতেও পারেন অর্পিতা। কিন্তু পার্থর এই সাহায্য না নিয়ে বরং ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীর থেকে কোনও আইনি সাহায্য নিতে চান না বলে জানিয়ে দিয়েছেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। তাহলে কি পার্থ সম্পর্কে ক্ষোভ জন্মেছে অর্পিতার? উঠছে প্রশ্ন।
আর কী জানা যাচ্ছে? জানা গিয়েছে, কোমরে–পায়ে ব্যথা সহ্য করে জেল–জীবনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কারণ এখনও কোনও বিকল্প উপায় মেলেনি। কিন্তু তিনি তো বলেছিলেন অর্পিতাকে তেমনভাবে চেনেন না। তাহলে সাহায্যের হাত বাড়ালেন কেন? অর্পিতার–পার্থর দু’জনের বক্তব্য অনুযায়ী, ওই টাকা তাঁদের নয়। তাহলে কার? অর্পিতার দাবি, তাঁর অনুপস্থিতিতে ফ্ল্যাটে টাকা ঢোকানো হয়েছে। কে ঢোকাল? এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন ইডির অফিসাররা। এখন পার্থের মুখ ভরে গিয়েছে দাড়িতে। চতুর্থ দিনে জেলবন্দি পার্থ আবার সিগনেচার ফ্রেঞ্চ কাট লুকে ফিরে এসেছেন। জেল কর্তৃপক্ষর কাছে নিজেই দাড়ি কাটার অনুরোধ করেন তিনি। তারপর জেলের নাপিতের কাছে দাড়ি কামান তিনি। নাপিত জানতে চান, ক্লিন শেভ রাখবেন কিনা। প্রাক্তন মন্ত্রীর স্পষ্ট উত্তর, ‘আমার যেমন দাড়ি ছিল তেমনই থাকবে।’
কেমন অসুবিধা সহ্য করতে হচ্ছে পার্থকে? এখন খাট পেলেও তা বাড়ির মতো আরামদায়ক নয়। মাথার উপর পাখা ঘুরছে। কিন্তু তাতে স্বস্তি নেই। অভ্যাস এসি’র হাওয়া খাওয়া। নিরামিষ খাওয়া কাকে বলে তিনি কার্যত জানেন না। কারণ মাছ–মাংস ছাড়া খাওয়ার অভ্যাস নেই তাঁর। আবার পছন্দ করেন পাঁঠার মাংস। একাধিকবার আমিষ খাওয়ার আবদার জানিয়েছেন তিনি। জেল সূত্রে খবর, কয়েদিদের জন্য একদিন করে মাংস, মাছ এবং ডিম বরাদ্দ থাকে দুপুরের পাতে। একদিন সওয়াবিন আর বাকি দিনে ডাল সবজি। এত কিছু সহ্য করেও পার্থ সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন অর্পিতার দিকে।