কলকাতা পুরসভার স্কুলগুলিতে শৌচাগার সংস্কার এবং স্কুলে বর্ষাতি ও স্কুল পোশাক কেনায় বড় দুর্নীতি সামনে এসেছে। এই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে পুরসভার শিক্ষা বিভাগে ৩ আধিকারিকের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত অধিকারীদের শোকজ করেছে পুর কর্তৃপক্ষ। এবার এই ঘটনায় মানসিক নির্যাতন এবং হয়রানি করার অভিযোগ তুললেন অভিযুক্ত আধিকারিকদের একজন। তাঁর নাম হল রুমানা খাতুন। তাঁর অভিযোগ, তিনি সংখ্যালঘু বলেই তাঁকে মানসিকভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগ জানিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ইমেইলে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ‘পঞ্চায়েতে দুর্নীতি হয়েছে’ মেনে অভিযুক্তদের প্রধান না করার কথা জানালেন উদয়ন
রুমানার অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে। এর জন্য তিনি পুরসভার মেয়রের ওএসডির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ওএসডি পুরসভার ভিজিলেন্স এবং সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা তিন পাতার চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তিনি ২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পুরসভার শিক্ষা দফতরের শিক্ষা অধিকারিক হিসেবে ছিলেন। পরে তাকে বালিগঞ্জে ইনস্টিটিউট অফ আর্বান ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজার করা হয়। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে বেআইনিভাবে বদলি করা হয়েছিল। মেয়ের অফিসে কর্মরত ওই আধিকারিকের মদতে তাঁকে শিক্ষা দফতর থেকে বদলি করা হয়। তাঁর স্বপ্ন ছিল, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য কাজ করা। কিন্তু, সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় বলে তিনি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, স্কুলের শৌচালয়ের সংস্কারের নামে প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকার দুর্নীতি করা হয় বলে অভিযোগ। যে ঠিকানার স্কুলের শৌচাগার সংস্কার করা হয়েছে। সেই ঠিকানায় কোনও স্কুলই নেই বলে সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার ভিজিল্যান্স কমিটি তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকার গরমিল পাওয়া গিয়েছে। পুরসভার ভিজিল্যান্স বিভাগের দাবি, ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এই গরমিল হয়েছে। সর্বশিক্ষা মিশনের আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি সংস্কারের জন্য এই টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেই টাকাতেই গরমিল খুঁজে পায় পুরসভার ভিজিল্যান্স কমিটি। ৬৩টি বিদ্যালয়ের শৌচাগার সংস্কারের জন্য ৬০ হাজার টাকা করে খরচ করা হয়েছিল। কিন্তু, খতিয়ে দেখা যায় আদৌও সেগুলি মেরামত করা হয়নি।
পুরসভার বাম প্রভাবিত সংগঠন কলিকাতা পৌর শিক্ষক ও কর্মী সঙ্ঘের অভিযোগ, শৌচাগার সংস্কারের ক্ষেত্রে স্কুলের প্রধানদের দিয়ে জোর করে প্রতিটি বিলে সই করানো হয়েছে। তাঁরা অভিযোগ জানিয়েছিলেন কিন্তু, তারপরেও কোনও কাজ হয়নি বলে তাদের অভিযোগ। অন্যদিকে, বর্ষাতি ও স্কুলের পোশাকের জন্য দু কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় শাস্তির দাবি জানিয়েছে ওই সংগঠন। তাদের দাবি, দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। যদিও এ বিষয়ে রুমানার কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।