বুধবার গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় একমাস পূর্ণ হয়েছে। এই একমাসে এখন পর্যন্ত বহুলত ভেঙে পড়ার কারণ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিতে পারল না তদন্ত কমিটি। তবে প্রাথমিক রিপোর্টে যে তথ্য উঠে এসেছে তাও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বহুতলটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল অতি নিম্ন মানের বালি, সিমেন্ট থেকে শুরু করে লোহার রড কিংবা স্টোন চিপ।
নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনা তদন্তের জন্য ২২ মার্চ সাত সদস্যের এক কমিটি গঠন করে কলকাতা পুরসভা। সেই কমিটি শুক্রবার একটি প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সেই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে , কম বিনিয়োগে বিশাল আয়ের লক্ষ্যেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্মাণ সংস্থার যে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন, তা-ও ছিল না ওই সংস্থাটির। কমিটির রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, বিপুল কলকাতা পুরসভার আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আবাসন নির্মাণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম নিয়মকানুন, নিরাপত্তাবিধি মানতে মানা হয়নি।
আরও পড়ুন। শেষ অর্থবর্ষে সর্বোচ্চ রাজস্ব দিয়েছে গার্ডেনরিচ, বিতর্কের মধ্যে খুশির খবর কলকাতা পুরসভায়
গত ১৭ মার্চ গভীর রাতে গার্ডেনরিচ এলাকার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে তৈরি হয়েছিল বহুতলটি। খোদ মুখ্যমন্ত্রীও ঘটনাস্থলে গিয়ে বেআইনী বহুতল গড়ে ওঠার বিরেদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়া নির্দেশ দেন। নড়চড়ে বলে কলকাতা পুরসভাও। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর শামস ইকবালের সঙ্গে প্রোমোটারের যোগসাজশেরও অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পরই ওই বরোর দায়িত্বে থাকা তিন ইঞ্জিনিয়ারকে শোকজ করা হয়। বহুতল ভাঙা নিয়ে বৈঠকে মেজাজ হারান, মেয়র ফিরহাদ হাকিম। একটি তদন্ত কমিটিও তৈরি করা হয়। ওই কমিটি শুক্রবার প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তারপর ওই তিন ইঞ্জিনিয়ারকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এক মাসেও কেন পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেওয়া গেল না নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলি। তবে কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়ার জন্য আরও দু’সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছে। কারণ, তদন্ত কমিটির পাশাপাশি রিপোর্ট তৈরি করতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। তারা ভেঙে পড়া নির্মাণের কলাম এবং চাঙড়ের নমুনা ও জমির মাটি সংগ্রহ করেছেন যাদবপুরের বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু মাটির নমুনা সংগ্রহ করতে বহুতলের আবর্জনা সরিয়ে গর্ত করতেই কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। তাই যাদবপুর থেকে রিপোর্ট এলেই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিতে পারবে কমিটি।