ওয়াটগঞ্জে খুন হওয়া মহিলার দু’টি হাত, পায়ের পাতা এবং বুকের নীচের অংশের খোঁজ নেই। দুর্গা সরখেলের দেহাংশ নদীতে ফেলে দিয়েছেন অভিযুক্ত নীলাঞ্জন সরখেল বলে পুলিশের ধারণা। এখন এই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মৃতার স্বামী খুনে অভিযুক্ত নীলাঞ্জনের থেকে পাঁচ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেটা নিয়েই ঝামেলা চলছিল। তাই খুন করা হতে পারে দুর্গা সরখেলকে। ওয়াটগঞ্জের যে বাড়িতে দুর্গার দেহ কাটা হয়েছিল সেখানে আজ, শুক্রবার পৌঁছেছেন কলকাতার ফরেনসিক দফতরের ডিএনএ বিভাগের অফিসাররা।
এদিকে মঙ্গলবার ওয়াটগঞ্জের একটি পরিত্য়ক্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ওই মহিলার দেহ। কালো প্লাস্টিকে মুড়িয়ে কয়েকটি ব্যাগে ছিল দুর্গার দেহের অংশ। দুর্গন্ধ বেরতে থাকে। সন্দেহ হওয়ায় থানায় খবর দেন এলাকারই কয়েকজন। তারপর মৃত মহিলাকে শনাক্ত করেন তাঁর দুই বোন। পুজোর ঘরও ঘুরে দেখছেন ফরেনসিক অফিসাররা। দুর্গার পরিবার তন্ত্রসাধনার অভিযোগ করেছিল। যেখানে দেহ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানেও গেল ফরেনসিক টিম। খিদিরপুরে ওয়াটগঞ্জ থানার এলাকার হেমন্তচন্দ্র স্ট্রিটে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। স্বামী, শাশুড়ি, ননদ এবং দেওরের সঙ্গে থাকতেন দুর্গা সরখেল। স্বামী নেশাগ্রস্ত হওয়ায় রিহ্যাবে পাঠানো হয়েছিল। বাড়ি ফেরেন সোমবার।
আরও পড়ুন: নবম শ্রেণির ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ, বীরভূমের পাঁচজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ
অন্যদিকে দুর্গার সঙ্গে তাঁর ভাসুর নীলাঞ্জনের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুর্গাকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় নীলাঞ্জনকে। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তে সহযোগিতা করছেন না নীলাঞ্জন। এখনও নীলাঞ্জন একই কথা বলছেন, ‘আমি কিছু জানি না।’ বয়ান বদলে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন নীলাঞ্জন। ময়নাতদন্তে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে খুন করা হয় দুর্গা সরখেলকে। তারপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে টুকরো টুকরো করা হয় দেহ। আর এই ঘটনাটি ঘটে দেহ উদ্ধারের ২০ ঘণ্টাকে আগে। ওয়াটগঞ্জের পরিত্যক্ত ব্যারাকে দুর্গার দেহাংশ মিলেছিল। সেখান থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব ৬০০ মিটার। পুলিশ সূত্রে খবর, বাড়ি থেকে সাইকেলে করে সেই দেহ এনেছিলেন অভিযুক্ত। দু’বারে বস্তায় ভরে আনা হয়েছিল দেহাংশ।
এছাড়া ইতিমধ্যেই কিছু সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ফুটেজে দেখা গিয়েছে, হাতে প্লাস্টিক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন নীলাঞ্জন। পরে আবার বাড়িতে ঢুকতে দেখা যায় তাঁকে। পুলিশ মনে করছে, ওই প্লাস্টিক ব্যাগে করেই সরানো হয়েছে দুর্গা সরখেলের দেহাংশ। সোমবার কোনও কারণে দুর্গার সঙ্গে বচসা হয় নীলাঞ্জনের। তারপরই খুন হতে হয় দুর্গা সরখেলকে। এমনকী দেহ অন্তত ৯ টুকরো করে প্রমাণ লোপাটের ছক কষা হয়। কিন্তু কী নিয়ে বচসা হয়েছিল? দেহের বাকি অংশ কোথায়? উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।