ডিনের পদত্যাগের জেরে থমকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর স্তরে ভরতি প্রক্রিয়া। পড়ুয়াদের ভাষা ও আচরণে অপমানিত হয়ে দু’মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দু’জন ডিন পরপর ইস্তফা দিলেন। এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে শিক্ষা মহলে। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি আপাতত ডিনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করছেন না।
ছাত্র সংসদের পাঠানো ই-মেলের ভাষা নিয়ে আপত্তি তুলে গত অক্টোবরে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ডিন। এরপর স্নাতকোত্তরে ভরতি নিয়ে ছাত্র সংসদের সদস্যদের ব্যবহারে অপমানিত হয়ে মঙ্গলবার ইস্তফা দেন বিজ্ঞান বিভাগের ডিন সুবীর মুখোপাধ্যায়। ছাত্র সংসদের সভাপতি জ্যোতির্ময় বিশ্বাসের নামে সরাসরি অভিযোগ করেছেন তিনি। অভিযুক্ত জ্যোতির্ময় এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, 'এই ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে যা বলার বলব।'
অতিমারীর কারণে এবার স্নাতকোত্তরে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে ৮০-২০ ফর্মুলায়। যাদবপুরের পড়ুয়াদের জন্য ৮০ শতাংশ এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য ২০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানের ছাত্র সংসদের দাবি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে পাশ করা সব স্নাতক পড়ুয়াকেই স্নাতকোত্তর কোর্সে ভরতি নিতে হবে। সান্ধ্য বিভাগে নয়, সকলকে ভরতি নিতে হবে দিবা বিভাগেই। প্রয়োজনে দিবা বিভাগে গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়নের আসন বাড়াতে হবে। কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি হননি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বিজ্ঞানে আসন বাড়ালে ল্যাবরেটরি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা দেয়। গণিতের আসন বাড়ালে পড়ুয়াদের বসতে দেওয়ার জায়গা থাকবে না।
ভরতি কমিটিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত (৮০-২০ ফর্মুলায় ভর্তি) বদল করতে চাননি বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। ডিনের কাছে ছাত্র সংসদের দাবি ছিল, ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করে নিজেদের সব ছাত্রছাত্রীকে ভরতি নিতে হবে। ডিন জানিয়ে দেন, ভরতি কমিটির সিদ্ধান্ত বাতিল করার ক্ষমতা তাঁর নেই। এই টানাপড়েনের ফলে স্নাতকোত্তর বিজ্ঞান বিভাগে ভরতির প্রক্রিয়া এখনও পর্যন্ত শুরু করা যায়নি।
শিক্ষক সমিতি জুটা-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘বারবার ছাত্রছাত্রীদের আচরণে শিক্ষকরা অপমানিত হতে থাকলে কোনও শিক্ষকই আর এগিয়ে এসে তাঁর কাজের বাইরে অন্য দায়িত্ব নিতে চাইবেন না। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশই বিঘ্নিত হবে।' বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সমিতিও বিষয়টির নিন্দা করেছে।
উপাচার্য সুরঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, তিনি ডিনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করছেন না। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। তিনি পড়ুয়াদের এটাই বলতে চান যে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের গুণমান অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর বিষয়টি মাথায় রেখে বাস্তব পরিস্থিতিটা মেনে নেওয়া দরকার। তিনি আশ্বাস দেন ‘কর্তৃপক্ষ কখনওই পড়ুয়াদের স্বার্থ বিরোধী কোনও পদক্ষেপ করবেন না।’