ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি শুরু করেছেন! ঘরে বসেই পড়াশোনা করতে চান! তাহলে অবশ্যই রাজ্যের এই পরীক্ষার বসার আগে প্রার্থীদের প্রস্তুতি নেওয়ার সঠিক কৌশল সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। ইউপিএসসির মতো প্রাথমিক বা প্রিলিমস পরীক্ষা, মেইনস বা প্রধান পরীক্ষা এবং গ্রুপ এ, গ্রুপ বি, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি শ্রেণী অনুযায়ী একটি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আবেদনকারীরা ডব্লিউবিসিএস অফিসার হতে পারবেন। তবে, তার আগে পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে হলে নিম্নলিখিত উপায়ে এগিয়ে চলুন। পরীক্ষার প্যাটার্ন ও সিলেবাস অনুযায়ী সরকারি চাকরি জেতার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে থাকুন।
- ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেবেন কীভাবে
ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রার্থীদের প্রস্তুতির তালিকা নীচে উল্লেখ করা হয়েছে।
১) কত ঘন্টা পড়াশোনা করতে হবে
প্রার্থীদের অবশ্যই প্রস্তুতির জন্য অনেকটা সময় দিতে হবে। সময়ের আগে সিলেবাস শেষ করে এবং সময়মতো রিভিশন শেষ করতে অবশ্যই দিনে ছয় থেকে আট ঘণ্টা পড়াশোনা করতে হবে এবং ফোকাস করতে হবে। তবেই, পরীক্ষার্থীরা সময়মতো পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
২) কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের জন্য প্রস্তুতি নিন
প্রার্থীদের অবশ্যই এই পরীক্ষার জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স জানতে হবে। বর্তমানে আপডেটেড বিষয়গুলি সম্পর্কে প্রস্তুত করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। এর জন্য তাঁরা দৈনিক সংবাদপত্র, ডিজিট্যাল পোর্টালের সাহায্যে আঞ্চলিক এবং জাতীয় ক্ষেত্রে বর্তমান বিষয়গুলির জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন। সবটা সহজে মনে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তারিখ সহ এই ঘটনাগুলির একটি তালিকা তৈরি করতে পারেন।
৩) আগের বছরের প্রশ্নপত্র নিয়ে প্রাকটিস করুন
প্রশ্নপত্রের প্যাটার্ন, প্রশ্নের ধরন এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি বোঝার জন্য প্রার্থীদের অবশ্যই পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নপত্র নিয়ে অনুশীলন করতে হবে।
৪) প্রাথমিক ধারণা নিন
প্রার্থীদের অবশ্যই এনসিইআরটি বইয়ের সাহায্যে পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী মূল বিষয়গুলি সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান থাকতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন দ্বারা এনসিইআরটি বইয়ের সঙ্গে পাঠ্যক্রম তৈরি করা হয়। তাই এটি প্রার্থীদের পরীক্ষার ভিত্তি বুঝতে এবং তাদের প্রস্তুতির জন্য একটি ভিত্তি তৈরি করতে সহায়তা করবে।
৫) একটি সময়সূচী তৈরি করুন
প্রার্থীদের অবশ্যই তাদের অধ্যয়নের সময়সূচী যথাযথভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। প্রতিটি বিষয়ে সমান সময় বরাদ্দ থাকতে হবে। প্রার্থীরা কখন প্রতিটি পেপার প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করছেন তা নির্দিষ্ট করতে হবে, পর্যাপ্ত সময়ের মধ্যে কোর্সটি সম্পূর্ণ করার জন্য। ফলে পরীক্ষার্থীদের বেশিক্ষণ পড়াশোনার ক্ষমতাও বাড়বে।
৬) মক টেস্ট দিন
এটি পরামর্শ দেওয়া হয় যে আবেদনকারীদের পূর্ববর্তী বছরগুলির ডব্লিউবিসিএস পেপারগুলি শেষ করার পাশাপাশি একাধিক মক পেপারগুলি অনুশীলন করতে হবে৷ এটি প্রার্থীদের ডব্লিউবিসিএস প্রিলিমস ২০২৪ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে এবং পরীক্ষার ফর্ম্যাট বুঝতে সাহায্য করবে।
- প্রিলিমস সিলেবাস
ডব্লিউবিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা সালের জুন মাসে কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলায় বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তফসিলি উপজাতি এবং দার্জিলিং জেলার তিনটি পাহাড়ি মহকুমা, দার্জিলিং সদর, মিরিক এবং কার্সিয়ং-এর প্রার্থীরা শুধুমাত্র দার্জিলিং কেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে সকল প্রার্থীকে মূল পরীক্ষার জন্য বাছাই করা হয়।
১) ইংরেজি রচনা: সমার্থক এবং বিপরীত শব্দ, শব্দভাণ্ডার পরীক্ষা, বাক্যাংশ, ক্রিয়াপদ ইডিয়ম এবং বাক্যাংশগুলি যোগ্য শব্দে পূরণ, হোমোফোন।
২) সাধারন বিজ্ঞান: সাধারণ উপলব্ধি, দৈনন্দিন পর্যবেক্ষণের বিষয়, বিজ্ঞান, এমন একজন শিক্ষিত ব্যক্তির কাছ থেকে প্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা যিনি বৈজ্ঞানিক বিষয়ে বিশেষ অধ্যয়ন করেননি।
৩) ভারতের ইতিহাস: প্রাচীন ইতিহাস, আধুনিক ইতিহাস এবং মধ্যযুগীয় ইতিহাস।
৪) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বের বর্তমান ঘটনা: উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যা ভারত এবং বিশ্বের সাথে এর সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।
৫) পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ উল্লেখ সহ ভারতের ভূগোল: ভৌত ভূগোল, অর্থনৈতিক ভূগোল, সামাজিক ভূগোল।
৬) ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন: উনিশ শতকের পুনরুজ্জীবনের প্রকৃতি ও চরিত্র, স্বাধীনতা অর্জন, জাতীয়তাবাদের বিকাশ।
৭) ভারতীয় রাজনীতি ও অর্থনীতি: ভারতীয় সংবিধান সাংবিধানিক সংস্থা, পঞ্চায়েতি রাজ।
৮) সাধারণ মানসিক ক্ষমতা: লজিক্যাল রিজনিং কমন অ্যাপটিটিউড
- মেইন সিলেবাস
যে প্রার্থীরা প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তাঁদের ডব্লিউবিসিএস মেইনস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য সুযোগ দেওয়া হয়। WBCS মেইন সিলেবাসে ছয়টি প্রয়োজনীয় পেপার এবং একটি অপশনাল বিষয় থাকে। প্রতিটি প্রধান পত্রের জন্য ২০০ নম্বর দেওয়া হয় এবং প্রতিটি পত্রের জন্য পরীক্ষা তিন ঘণ্টা করে নেওয়া হয়।
১) বাংলা/হিন্দি/উর্দু/নেপালি/সাঁওতালি ভাষার পেপার: চিঠি লেখা (১৫০-শব্দের সীমা), প্রতিবেদন লেখা (২০০-শব্দের সীমা), ইংরেজি থেকে বাংলা/হিন্দি/উর্দু/নেপালি/সাঁওতালিতে অনুবাদ।
২) ইংরেজি: চিঠি লেখা (১৫০ শব্দের সীমা), রিপোর্ট লেখা (২০০ শব্দের সীমা), বাংলা / হিন্দি / উর্দু / নেপালি / সাঁওতালি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ।
৩) জেনারেল স্টাডিজ I: জাতীয় আন্দোলনের উপর জোর দিয়ে ভারতীয় ইতিহাস, পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ উল্লেখ সহ ভারতের ভূগোল।
৪) জেনারেল স্টাডিজ II: বিজ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সাধারণ জ্ঞান পরিবেশের বর্তমান বিষয়
৫) ভারতের সংবিধান এবং ভারতীয় অর্থনীতি: ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভূমিকা ও কার্যাবলী
৬) ক. পাটিগণিত: এটি পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমিক পরীক্ষার বাধ্যতামূলক গণিত পত্রের সমান।
খ. রিজনিং এর পরীক্ষা: বিশ্লেষণাত্মক যুক্তির ডেটা পর্যাপ্ততা লজিক্যাল রিজনিংয়ে লজিক্যাল ডিডাকশন, আর্গুমেন্ট, ডায়াগ্রাম থেকে কনক্লুশন অঙ্কন, বাক্যের অন্তর্নিহিততা এবং বর্ণমালা সিরিজ, প্রতীক ব্যাখ্যা, গাণিতিক ধাঁধা ডেটা বিশ্লেষণ, অ-মৌখিক যুক্তি, অড ম্যান উপলব্ধি পরীক্ষা, সঠিক ক্রম নির্বাচন ইত্যাদি
৭) অপশনাল বিষয়: প্রার্থী দ্বারা নির্বাচিত বিষয় অনুযায়ী দু'টি পেপার।
- ডব্লিউবিসিএস ব্যক্তিত্ব পরীক্ষার/ পার্সোনালিটি টেস্টের সিলেবাস
প্রত্যেক প্রার্থী যাঁরা ডব্লিউবিসিএস প্রধান পরীক্ষার প্রথম দু'টি ধাপে উত্তীর্ণ হন, তাঁদের পার্সোনালিটি টেস্টের জন্য ডাকা হয়। পরীক্ষাটির লক্ষ্য প্রার্থীর চরিত্রের গুণাবলী যেমন নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা এবং নৈতিক সততা, যৌক্তিক এবং স্পষ্ট উপস্থাপনা দক্ষতা এবং বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা মূল্যায়ন করা। এই সাক্ষাৎকারে প্রত্যেক প্রার্থীকে সাধারণ আগ্রহের বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। নিম্নলিখিত গ্রুপ অনুযায়ী ব্যক্তিত্ব পরীক্ষার স্কোর দেওয়া হয়।
গ্রুপ 'এ' এবং 'বি' প্রার্থীদের জন্য ২০০ নম্বর
গ্রুপ 'সি' প্রার্থীদের জন্য ১৫০ নম্বর
গ্রুপ 'ডি' প্রার্থীদের জন্য ১০০ নম্বর
- প্রিলিম পরীক্ষার প্যাটার্ন
ডব্লিউবিসিএস প্রিলিমস প্রশ্নপত্র সম্পূর্ণ করতে আড়াই ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মূল পরীক্ষার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
১) ইংরেজি রচনার জন্য বরাদ্দ ২৫ নম্বর।
২) সাধারন বিজ্ঞানের জন্য বরাদ্দ ২৫ নম্বর।
৩) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বের বর্তমান ঘটনার জন্য বরাদ্দ ২৫ নম্বর।
৪) ভারতের ইতিহাসের জন্য বরাদ্দ ২৫ নম্বর।
৫) পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ উল্লেখ সহ ভারতের ভূগোলের জন্য বরাদ্দ ২৫ নম্বর।
৬) ভারতীয় রাজনীতি ও অর্থনীতির জন্য বরাদ্দ ২৫ নম্বর।
৭) ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের জন্য বরাদ্দ ২৫ নম্বর।
৮) সাধারণ মানসিক ক্ষমতার জন্য বরাদ্দ ২৫ নম্বর।
- মেইন পরীক্ষার প্যাটার্ন
ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল মেইন পরীক্ষা। ছয়টি বাধ্যতামূলক প্রশ্নপত্র এবং দুটি অপশনাল বিষয়ের পেপার নিয়ে পরিচালনা হয় মোট ১৬০০ নম্বরের এই পরীক্ষা।
১) বাংলা/হিন্দি/উর্দু/নেপালি/সাঁওতালি পেপারের জন্য বরাদ্দ ২০০ নম্বর।
২) ইংরেজি পেপারের জন্য বরাদ্দ ২০০ নম্বর।
৩) জেনারেল স্টাডিজ: পশ্চিমবঙ্গের ভৌগলিক পটভূমি এবং ভারতের মহাকাব্য স্বাধীনতা সংগ্রামে এর গতিশীল ভূমিকা অন্বেষণ পেপারের জন্য বরাদ্দ ২০০ নম্বর।
৪) জেনারেল স্টাডিজ: বিজ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, পরিবেশ, সাধারণ জ্ঞান এবং বর্তমান বিষয় পেপারের জন্য বরাদ্দ ২০০ নম্বর।
৫) ভারতের সংবিধান এবং ভারতীয় অর্থনীতি পেপারের জন্য বরাদ্দ ২০০ নম্বর।
৬) পাটিগণিত এবং রিজনিং পেপারের জন্য বরাদ্দ ২০০ নম্বর।
৭) ঐচ্ছিক বিষয় বা অপশনালের দু'টো পেপারের জন্য বরাদ্দ ২০০ ২০০ করে ৪০০ নম্বর।