দক্ষিণ কলকাতায় রোড–শো শেষে সোমবার রাসবিহারী অ্যাভিনিউর সভায় তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক হাতে নিলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে এদিন তিনি বললেন, ‘হাফ লাখ ভোটে যদি নন্দীগ্রামে মাননীয়াকে হারাতে না পারি আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।’
এদিনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামের সভা থেকে ঘোষণা করেছেন যে তিনি আসন্ন নির্বাচনে সেই আসন থেকেই লড়বেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে মমতাকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, ‘আপনি বলেছেন নন্দীগ্রামে দাঁড়াবেন। কিন্তু কোনও সভায় দাঁড়িয়ে বিজেপি বলতে পারে না যে কে কোথায় দাঁড়াবে। এখানেই বিজেপি–র সঙ্গে আপনাদের কোম্পানির তফাৎ। এটা একটা শৃঙ্খলাপরায়ণ দল।’
শুভেন্দু চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘আমাকে পাঠিয়ে দিক বা অন্য কাউকে নন্দীগ্রামে দাঁড় করাক। লিখে রাখুন, সন্ধেবেলায় ঘড়িতে সময় দেখে তারিখ দিয়ে লিখে রাখুন, হাফ লাখ ভোটে যদি নন্দীগ্রামে মাননীয়াকে হারাতে না পারি আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।’ শুভেন্দুর দাবি, ‘নন্দীগ্রামে আজ ৭টা জেলা থেকে ৩০ হাজার লোককে জড়ো করেছিল তৃণমূল। ৮০০টা ছোট–বড় গাড়ি ছিল। আর ওই সভা কোনও রাজনৈতিক দলের সভা নয়, হায়দরাবাদের একটা পার্টি আছে, ওই পার্টিটার মতো সভা ছিল।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে শুভেন্দু বলেন, ‘তিনি প্রতি ৫ বছর অন্তর অন্তর নন্দীগ্রামে যান। যখন ভোট আসে তখন যান। তার আগে তাঁর নন্দীগ্রামের কথা মনে পড়ে না। ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর গিয়ে আমাকে প্রার্থী ঘোষণা করে এসেছিলেন। আজকে ঠিক ৫ বছর পর ভোটের আগে নন্দীগ্রামের কথা মনে পড়েছে।’
এদিন নন্দীগ্রামের সভায় মমতা বলেছেন যে তাঁকে রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভাই দেখতে হয়। সেই কথাকে ধরে শুভেন্দুর কটাক্ষ, ‘ওই পার্টির নেত্রীর এত বিরাট বুদ্ধি যে নিজেই ২৯৪টি আসনে লড়েন। প্রতিটি জেলায় তিনি নিজেই অবসার্ভার।’ তৃণমূলের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর ও তাঁর আই–প্যাক সংস্থার নাম না করে শুভেন্দু বলেন, ‘বিহার থেকে একটা ঠিকাদার এজেন্সিকে নিয়ে এসেছে। যার বুদ্ধি ধার করতে হয়েছে। এখানেই বিজেপি জিতে গিয়েছে।’
শুভেন্দু রাজ্য প্রশাসন ও মমতার বিরুদ্ধে আঙুল তুলে বলেন, ‘নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশ আধিকারিক অরুণ গুপ্তাকে ৬০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর ৪টে এক্সটেনশন দিয়েছে কে? তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামের গোকুলনগরে অধিকারীপাড়ায় গুলি চালানোর ঘটনায় সিবিআইয়ের চার্জশিটে নাম রয়েছে সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর তাঁকেই দলের মহাসচিব (পার্থ চট্টোপাধ্যায়) তৃণমূল ভবনে নিয়ে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করিয়েছেন।’
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম না করে শুভেন্দু বলেন, ‘টেট কেলেঙ্কারিতে যুক্ত তিনি। এসএসসি তুলে দিয়েছেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে হরিবোল করে দিয়েছেন।’ শুভেন্দুর অভিযোগ, ‘অষ্টম শ্রেণির বইতে সিঙ্গুরের কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু নন্দীগ্রামের আন্দোলন নিয়ে একটি কথাও নেই।’ শুভেন্দু রীতিমতো হুঙ্কার দিয়ে বলেন, ‘আমার বাড়ি বঙ্গোপসাগরের পাশে বালুভূমিতে। অরণ্যসুন্দরী জঙ্গলমহলের মানুষ দিলীপ ঘোষ। আমরা দু’জন হাত মিলিয়েছি। তৃণমূল নামক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিকে উৎখাত করে ফেলবই।’