সবুজ আবিরে ডেকেছে রাস্তাটি। উল্লাসে মেতেছেন কর্মী–সমর্থকরা। এটা নির্বাচনে জেতার পরিচিত ছবি। কিন্তু বিরোধীরা খড়কুটোর মতো উড়ে যাচ্ছে, একেবারে দাঁড়াতে পারছে না—এটা পরিচিত ছবি নয়। যা দেখল বিধাননগর। ৪০টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রধান বিরোধীদল বিজেপি শূন্য হাতেই ফিরল। ঘাসফুল ঝড়ে উড়ে গেল পদ্মফুল। কেন এমনটা হল? নেপথ্যে উঠে এলো একাধিক কারণ।
এক, এখানে বিজেপি টক্কর দেওয়ার মতো প্রার্থী দিতে পারেনি। যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের সবই কার্যত হেভিওয়েট প্রার্থী। তাছাড়া তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের সঙ্গে বিধাননগরের মানুষের পরিচয় রয়েছে। যা ছিল না বিজেপি প্রার্থীদের। এমনকী বাড়ি বাড়ি যেতে পর্যন্ত পারেননি বিজেপি প্রার্থীরা। ফলে মানুষ বরসা করতে পারেননি।
দুই, মানুষ এখানে বিজেপিকে বিকল্প শক্তি হিসাবে দেখেনি। কারণ তারা ইস্তেহার প্রকাশ করে বলতে পারেননি ক্ষমতায় এলে তাঁরা কি কাজ করবেন। বিধাননগর, সল্টলেক থেকে রাজারহাট এলাকায় একাধিক নাগরিক পরিষেবায় কাজ হয়েছে। যার বিরোধিতা করতে পারেননি বিরোধী দলগুলির কোনও নেতারা। উলটে বিজেপি সর্বভারতীয় সহ–সভাপতিকে রোজ দেখা গিয়েছে ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণ করতে।
তিন, এখানে এখন মাত্র দুটি সমস্যা রয়েছে। ১) পানীয় জল আর ২) নিকাশি। এছাড়া স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে উন্নয়ন সবই হয়েছে এখানে। যা প্রচারের আলোয় আনতে পেরেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে না হওয়া কাজ এবার হবে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। আর এই না হওয়া কাজ নিয়ে প্রচারে ঝড় তুলতে পারেননি বিজেপি–সহ অন্যান্য বিরোধীরা।
চার, প্রচারে দেখা যায়নি বিজেপিকে। যে কথা ভোট দিতে এসে বলেছিলেন বিজেপি থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। বিজেপির কর্মীরা মাঠেও নামেননি। সেখানে প্রচারে তৃণমূল কংগ্রেস প্রথম থেকেই এগিয়ে ছিল। বাড়ি বাড়ি যেতে পেরেছিল। কি কাজ হয়েছে এতগুলি বছরে তা তুলে ধরা হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। একইসঙ্গে এখানে সংগঠন শক্তিশালী তৃণমূল কংগ্রেসের। যার সামনে দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি। কারণ তাদের সংগঠনে কোন্দল রয়েছে।
আর ফলাফল তাই বিধাননগর দখল তৃণমূল কংগ্রেসের। ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৯টি আসনে জয় তৃণমূল কংগ্রেসের। ১টি নির্দল এবং ১টি কংগ্রেস। এই নির্দলও তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেবে বলে খবর। সুতরাং বিরোধী বলতে একটি আসন। তাহলে অঙ্ক দাঁড়াল শাসকদল ৪০টি আসন আর বিরোধী একটি আসন। এছাড়া আরও একটি কারণ এখানে দেখা দিয়েছে। সেটি হল অর্জুন সিংকে এখানের দায়িত্ব দেওয়া হল। যিনি এই এলাকাটি চেনেন না। অথচ এই এলাকার বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যকে এগোতে দেওয়া হল না। সব মিলিয়ে বিজেপিকে খুঁজে পাওয়া গেল না গোটা নির্বাচনে।