এবার লোকসভা নির্বাচনে অসমের চারটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। শিলচরের দলের প্রার্থীর হয়ে প্রচারে আজ অসমে এসে পৌঁচ্ছাছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের অসম প্রদেশ সভাপতি রিপুন বরা সোমবার এক সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি জনসমক্ষে তুলে ধরেন। তিনি জানান, আপাতত শিলচরেই প্রচারে আসছেন মমতা। তবে বাকি তিনটি আসনে দলের তরফে অন্যান্য নেতারা প্রচার করছেন।
রিপুন জানিয়েছেন, ১৭ এপ্রিল বেলায় কলকাতা থেকে বিশেষ বিমানে শিলচরে এসে পৌঁছাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে এক মোটরসাইকেল র্যালির মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে আসা হবে শিলচরে। এখানে টাউন ক্লাব ময়দানে এক বিরাট জনসভায় অংশ নেবেন তিনি। টানা দেড় ঘণ্টা সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলবেন তৃণমূল নেত্রী। এরপর বিশেষ বিমানে ফিরে যাবেন কলকাতায়।
২০১৮ সালে অসমে এনআরসির দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর মহুয়া মৈত্র-সহ একটি বিশেষ দল শিলচর এসেছিল। তবে তাঁদের বিমানবন্দর থেকে কলকাতা ফিরে যেতে হয়েছিল। অসমে নাগরিকত্ব বিষয়ক নানা সমস্যার বিরুদ্ধে বরাবর সোচ্চার হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রিপুন জানান, এব ছর নির্বাচনেও তাদের প্রচারের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে নাগরিকত্ব, এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA)। তিনি বলেন, 'এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা একেবারে তৃণমূল স্তরে প্রচার করছি। দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন শিলচরে দাঁড়িয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন, অবশ্যই সেখানে এই বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।'
অসমের ১৪টি লোকসভা আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস শিলচর, কোকরাঝাড়, বরপেটা এবং লখিমপুরে প্রার্থী দিয়েছে। শিলচরের প্রার্থী হচ্ছেন প্রাক্তন সাংসদ রাধেশ্যাম বিশ্বাস, কোকরাঝাড়ে গৌরীশংকর সারানিয়া, বরপেটায় আবদুল কালাম আজাদ এবং লক্ষীমপুরে গণকান্ত চুতিয়া। রিপুন জানিয়েছেন, বেশ কয়েক দফা আলোচনার পরেও কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়নি, ফলে তারা আলাদাভাবেই নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে জাতীয়স্তরে দুটো দলই ইন্ডিয়া জোটের সদস্য এবং তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিজেপিকে আটকানো।
তিনি বলেন, 'আমরা এমন আসনে প্রার্থী দিয়েছি যেখানে কংগ্রেস দুর্বল। শিলচরে কংগ্রেসের প্রার্থী অত্যন্ত দুর্বল এবং তার তুলনায় বিজেপি দলের হেভিওয়েট নেতা পরিমল শুক্ল বৈদ্যকে প্রার্থী করেছে। আমরা করিমগঞ্জে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি না কারণ সেখানে কংগ্রেসের অবস্থা বিজেপির তুলনায় ভালো। আমরা যে চার আসনে প্রার্থী দিয়েছি, প্রায় সবগুলোতেই জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিজেপিকে আটকানো।'
দলের তরফে রাজেশ দেব জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাকে সফল করতে দলের প্রত্যেক স্তরের কর্মীরা মাঠে নেমেছেন এবং তাঁরা আশাবাদী যে লক্ষাধিক মানুষ সভায় উপস্থিত থাকবেন। তিনি বলেন, 'অসমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা রয়েছে এবং তিনি প্রচারে এলে অনেক কিছুই পালটে যেতে পারে। আমরা একেবারে তৃণমূলস্তরে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের প্রচারের ধরন বিজেপি থেকে একেবারেই আলাদা। আমাদের প্রার্থীও অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং শিলচর আসনে আমাদের দল অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে।'
আরও পড়ুন: Mamata on gomutra: সকালের চায়ের সঙ্গে গোমূত্র, দুপুরের খাবারে গোবর মিশিয়ে দেবে, BJP-কে তোপ মমতার
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে গোটা দেশের প্রবল নরেন্দ্র মোদী-ঝড় থাকা সত্ত্বেও শিলচর আসনে জয়ী হয়েছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষমোহন দেবের কন্যা সুস্মিতা দেব। ২০১৯ সালে তিনি বিজেপির প্রার্থী রাজদীপ রায়ের কাছে হেরে গেলেও চার লাখের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। ২০১৯ সালেও শিলচরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস এবং দলের প্রার্থীর হয়ে প্রচারে আসার কথা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শেষ মুহূর্তে সেটা বাতিল হয় এবং মমতা ফিরহাদ হাকিমকে শিলচরে প্রচারে পাঠান। এক প্রচারসভায় মোবাইলে বার্তাও পাঠিয়েছিলেন মমতা।
২০২১ সালে কংগ্রেস দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন সুস্মিতা দেব এবং পরবর্তীতে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠান মমতা। এবছর সুস্মিতা পুনরায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন এবং অসমে দলের হয়ে প্রচার করছেন। তিনি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বিজেপি যেভাবে কংগ্রেসের প্রায় প্রত্যেক জনপ্রিয় নেতাকে ভয় বা লোভ দেখিয়ে তাদের দলে নিয়ে যাচ্ছে, এর থেকে বাঁচতে তৃণমূল কংগ্রেস খুব সাবধানে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।