বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে ঠাকুনগরের মতুয়াবাড়ি ধুন্ধুমার কাণ্ড চলেছে। বড়মা বীণাপানিদেবীর 'ঘর দখলকে' কেন্দ্র করে শান্তনু ঠাকুর বনাম মমতাবালা ঠাকুরের সংঘাতের সাক্ষী থাকলেন মতুয়া ভক্তরা। হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীর উৎসবের আবহেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঠাকুরনগর। আর এই সবের মাঝে ঠাকুরনগর ছেড়ে দিল্লির পথে পাড়ি জমালেন মমতাবালা ঠাকুর। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ তথা তৃণমূল নেত্রী সম্প্রতি রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এই আবহে তিনি দিল্লি গেলেন রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে শপথগ্রহণ করতে। তবে এই 'খুশির দিনে' তাঁর গলায় শোনা গেল বিষাদের সুর। ঠাকুরনগর ছাড়ার সময় আবেগতাড়িত হয়ে বললেন, 'বিধবা হওয়া যে কতটা যন্ত্রণার, তা আম বুঝলাম। আমি অসহায় মানুষ। এখন আমার জীবনের সম্বল শুধুই চোখের জল। এই যুগে এসেও আমাকে বিধবার যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে।' (আরও পড়ুন: তরুণীকে চুমুর পর এবার পালা যুবকের, বিতর্কে জল ঢালতে 'নয়া কীর্তি' বিজেপির খগেনের)
আরও পড়ুন: ১৫ বছর পর ফের লন্ডন পর্যন্ত ননস্টপ উড়ান চালু হতে পারে কলকাতা থেকে: রিপোর্ট
দিল্লি যাওয়ার আগে মমাবালা ঠাকুর বলেন, বড়মার ঘর তো দূর, নিজের ঘরেও তিনি যেতে পারছেন না এখনও। দিল্লির পথে তিনি নিজের জুতোও পরেননি বলে দাবি করেন তৃণমূল নেত্রী। মমতাবালা জানান, তিনি মেয়ের জুতো পরে দিল্লি যাচ্ছেন। এর আগে শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে তাঁকে এবং তাঁর মেয়েকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন মতাবালা ঠাকুর। পুলিশে দায়ের হয়েছিল অভিযোগও। এই সবের মাঝেই রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে শপথ নিতে মতুয়াগড় ছাড়লেন মমতাবালা ঠাকুর। (আরও পড়ুন: রাজ্যে মাত্র একজন CAA-র মাধ্যমে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন, বড়া দাবি CM-এর)
আরও পড়ুন: বাংলায় শিক্ষকের বেতন '১০০ দিনের কাজের' মজুরির থেকেও কম? বিজ্ঞপ্তিতে বিতর্ক
উল্লেখ্য, গত ৭ এপ্রিল রাত থেকে বড়মা বীণাপানিদেবীর ঘর 'দখল' করাকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার কাণ্ডের সাক্ষী থাকে গাইঘাটার ঠাকুরবাড়ি। মতাবালা ঠাকুরের অভিযোগ, রাতে যখন শান্তনু ঠাকুর তালা ভেঙে বড়মার ঘরে ঢোকেন, তখন তাঁকে এবং তাঁর মেয়েকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। বড়মার ঘরে জুতো পরে ঢোকা হয় বলেও দাবি মমতাবালা ঠাকুরের। এদিকে শান্তনু ঠাকুর, তাঁর বাবা সহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে গাইঘাটা থানায়। পরে ৮ তারিখ সকালে এক ভিডিয়ো পোস্ট করে তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করে, ঠাকুরবাড়িতে মন্দিরে জুতো পরেই প্রবেশ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই অভিযোগের পক্ষে একটি ভিডিয়ো (যদিও ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা) প্রকাশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে দেখা গিয়েছে হলুদ জামা পরিহিত শান্তনু ঠাকুর একটি চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর সামনেই সম্ভবত প্রণামীর থালা। আর সেখানে একজন জুতো পরে দাঁড়িয়ে আছেন চৌকাঠের পাশেই।
আরও পড়ুন: রাজ্যের সরকারি কর্মীদের পেনশন নিয়ে বড় পর্যবেক্ষণ হাই কোর্টের, জানুন বিস্তারিত
এই আবহে ঠাকুরবাড়িকে 'অপবিত্র' করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মমতাবালাও। শান্তনুর বিরুদ্ধে মমতাবালা বক্তব্য ছিল, 'আজ তাঁরা এখানে অধিকার দেখাচ্ছে। অধিকার থাকতেই পারে। কিন্তু আমি কী অন্যায় করেছি? আমি তাহলে আমার বাচ্চাগুলোকে নিয়ে কোথায় যাব? কীভাবে থাকব? বিজেপির ক্যাডাররা লাঠি নিয়ে ঘুরছে। বাড়িতে এখন হরিনাম নেই। শুধু শোনা যায় জয় শ্রী রামের স্লোগান... আমিও তো রাজনীতি করি। ঠাকুরবাড়িতে কোনও স্লোগান তো বাড়িতে দিই না।' মমতাবালা ঠাকুরের দাবি, তিনি ১৯৮৫ সাল থেকে সেই বাড়িতে থাকেন। মমতাবালার বক্তব্য, 'বড়মা বেঁচে থাকা অবস্থায় কেন ওরা ঘরে দখল নিতে আসেনি। কেনই বা শান্তনু ঠাকুরদের জন্ম এই বাড়িতে হয়নি? কারণ আমার শ্বশুরমশাই প্রমথরঞ্জন ঠাকুর ওদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে দিয়েছিল।' এদিকে এই গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে শান্তনুর বক্তব্য ছিল, 'আমার ঠাকুমা-ঠাকুরদাদার ঘর। অনেকবার ঢুকতে চেয়েছি। ওরা দখল করে রেখেছিল।'