পরপর দুইবার সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি। এবার তৃতীয় বার জনাদেশ নিতে জনতার দরবারে নরেন্দ্র মোদী। অ্যান্টি ইনকমবেন্সি নয়, প্রো-ইনকামবেন্সির ওপর ভরসা করে আসনসংখ্যা বাড়িয়ে নিতে চান প্রধানমন্ত্রী। তাই তো তার নতুন টার্গেট ৩৭০ আসন বিজেপির জন্য। উল্লেখ্য ৫৪৩ আসন বিশিষ্ট লোকসভায় ম্যাজিক ফিগার ২৭২। তাই বোঝাই যাচ্ছে দুই-তৃতীয়াংশ আসন দখল করতে চাইছে শাসক দল। দলের সর্বভারতীয় জাতীয় পরিষদের দুইদিন ব্যাপী বৈঠকে ফের টার্গেটটা মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তবে ৩৭০-র সংখ্যাটির সঙ্গে যে মানুষটা জড়িয়ে, সেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কথাও এদিন উল্লেখ করেন তিনি। তাঁকে সম্মান জানাতেই এই সংখ্যাটি বিজেপিকে জিততে হবে, সেই কথাও স্পষ্ট করে দেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিনের বৈঠকে কি হয়েছে, তা পরে সাংবাদিকদের জানান বিজেপির জাতীয় সাধারণ সচিব বিনোদ তাওড়ে। অসুস্থ থাকায় বঙ্গ বিজেপির প্রধান সুকান্তবাবু যেতে পারেননি। তবে উপস্থিত আছেন দিলীপ ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারী। তাদের সামনেই এদিন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কথা বলেন মোদী। প্রসঙ্গত, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কাশ্মীরের বিশেষ স্ট্যাটাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালে অবশেষে ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করে কাশ্মীরের সেই বিশেষ স্ট্যাটাসটি মুছে দেয় বিজেপি সরকার। রামমন্দির ছাড়াও বিজেপির যে কোর এজেন্ডা আছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল এই ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি। পাঁচ বছর কেটে গেলেও জনমানসে যাতে এই সাফল্যের বিষয়টি থেকে যায়, সেই কারণেই এই সংখ্যাটির ওপর জোর দিচ্ছেন মোদী বলেই মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও শ্যামাপ্রসাদবাবুর প্রতি সম্মানের কথা জানিয়ে বঙ্গ বিজেপিকেও চাঙ্গা করার সুযোগ তিনি হাতছাড়া করেননি। প্রসঙ্গত, গতবার কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই রাজ্যে ১৮টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। তারপরের কোনও নির্বাচনে যদিও পারফরমেন্সের সেই গ্রাফ ধরে রাখতে পারেনি তারা। এবার তাই সেই আসনের ধারকাছে যেতে মরিয়া গেরুয়া শিবির।
প্রধানমন্ত্রী এদিন দলীয় নেতাদের বলেন যে ক্যাডাররা যেন নিশ্চিত করেন যে প্রতি বুথ থেকে অন্তত ৩৭০টি ভোট যেন কমল চিহ্নে পড়ে। প্রথমবার যারা ভোট দিচ্ছেন, তাদের কাছে পৌঁছে গিয়ে গত দশ বছরে কী কী উন্নতি হয়েছে, তার বিস্তারিত ফিরিস্তি দিতেও নির্দেশ দিয়েছেন মোদী, বলেন জানিয়েছেন বিনোদ তাওড়ে।
মহিলা ভোটাররা গত দুইবার দুহাত তুলে আশীর্বাদ করেছেন বিজেপিকে। এবারেও যাতে সেই ট্রেন্ড অব্যাহত থাকে, তার ওপর নজর দিতে বলেছেন মোদী। বিজেপির দশ বছরে যে সেরকম বড় কোনও দুর্নীতির অভিযোগ আসেনি এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থেকেছে, সেই বিষয়টি বারবার করে ভোটারদের কাছে তুলে ধরার ওপর তিনি জোর দিয়েছেন। তবে ভোটের সময় বিরোধীরা যে বিভিন্ন বিষয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে, নেতিবাচক প্রচার করবে, সেই নিয়েও তিনি নেতাদের সতর্ক করে দেন। কোনওভাবেই অপ্রয়োজনীয় ইস্যুতে নেতাদের জড়িয়ে পড়তে তিনি মানা করেন। এর থেকে মনে হচ্ছে যে বিতর্কিত কোনও বিষয় নিয়ে কথা বলতে বারণ করছেন প্রধানমন্ত্রী। মূলত উন্নয়নের এজেন্ডা নিয়ে মোদীর গ্যারান্টির কথা তুলে ভোটে লড়ুন, জাতীয়স্তরের এই বৈঠকে সেই নীল নকশাই এঁকে দিলেন নরেন্দ্র মোদী।