অন্তিম লগ্নে রানি রাসমণি…. শেষ যাত্রাতেও ব্রাহ্মণ সমাজের বাধা। রানিমার 'অন্তর্জলী যাত্রা' নিয়ে ঘোর আপত্তি তাঁদের। মৃত্যু পথযাত্রী রানিমাকে শুনতে হল ‘দাম্ভিক’ তকমা, কিন্তু মা ভবতারিনীর কৃপায় তাঁর রানির ইচ্ছাপূরণ হবে না তাও কী হয়! এমনই টানটান উত্তেজনার সঙ্গে শুরু এক সফর শেষের। চার বছর ধরে সন্ধ্যে সাড়ে ছটা বাজলেই টিভির সামনে বসে পড়ত বাঙালি সিরিয়ালপ্রেমীরা, রানিমার করুণাময়ী রূপের মোহেই দিনের পর দিন জুড়ে থাকা এই কাহিনির সঙ্গে। কথায় বলে যার শুরু আছে তার শেষও আছে…. সেই নিয়মেই গল্প ফুরালো ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’র।
পরলোকে যাত্রা করলেন রানিমা, সিরিয়াল শেষ না হলেও আর দেখা যাবে না রানিমাকে বা বলা ভালো সকলের প্রিয় দিতিপ্রিয়া রায়কে। যিনি সেই পনেরো বছর বয়স থেকে জান-প্রাণ ঢেলে এই ঐতিহাসিক চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছেন ছোটপর্দায়। এই বিদায় তাই কাঁদিয়ে দিয়ে গেল সিরিয়ালের ভক্তদের। অন্তিম এপিসোড দেখতে গিয়ে চোখের কোণ ভেজে এমন দর্শক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সোশ্যাল মিডিয়াতেও উপচে পড়ছে প্রশংসা বাণী। চ্যানেলের ফেসবুক পেজে কেউ লিখেছেন- ‘বয়স অল্প, কিন্তু অভিনয়ে দিতিপ্রিয়াই সেরা’। কেউ লিখেছেন- ‘অপূর্ব অভিনয় চোখে জল চলে এল’।
১৫ বছর বয়সে যখন রানিমা হিসাবে দিতিপ্রিয়া সফর শুরু করেছিলেন, তখন কথা ছিল তিন থেকে ছয়মাস এই চরিত্রে অভিনয় করবেন তিনি। কিন্তু দর্শকেদর ভালোবাসায় তিনি থেকে গেলেন রানিমা হিসাবে। কৈশোর পেরিয়ে, যৌবন এবং প্রৌঢ়া- সব বয়সের রাণীর চরিত্রে দিতিপ্রিয়া। বয়সটা যে দিতিপ্রিয়ার বড্ড কম তা অভিনয় দক্ষতায় কোনওদিন বুঝতে দেননি। মাত্র ১৮ বছর বয়সে সত্তোর ছুঁইছুঁই প্রৌঢ়ার চরিত্রে অভিনয়ের চ্যালেঞ্জ লুফে নিয়েছিলেন তিনি।
চার বছরের সফরে কম ট্রোলিংয়ের সামনেও পড়েননি দিতিপ্রিয়া। ‘রক্কে করো রঘুবীর’ কিংবা ‘বাবাজীবন তুমি এয়েচো’- এইসব সংলাপ নিয়ে কম মিমি ছড়িয়ে পড়েনি সোশ্যালে, মাঝেমাধ্যে ইতিহাস বিবৃতির অভিযোগও উঠেছে ধারাবাহিকের বিরুদ্ধে। কিন্তু সব বিতর্কের উর্দ্ধে উঠে এই সিরিয়াল নিজের জায়গা ধরে রেখেছে দর্শক মনে আর টিআরপি তালিকাতেও।
‘আমার কাছে এয়েচো তুমি মা…’, এই সংলাপেই বিদায় নিলেন রানিমা। 'অষ্ট সখীর এক সখী' চলে গেল… কিন্তু রানিমার এই কাহিনি এগিয়ে নিয়ে যাবেন তাঁর ছোট ঠাকুর। সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘রাণী রাসমণি: উত্তর পর্ব’। রানিমা বিদায় নিলেন, তবে তিনি রয়ে যাবেন বাঙালির হৃদয়ে। দিতিপ্রিয়ার কথায়, ‘রানিমার দয়াময়ী দিকটা আর প্রতিবাদী দিকটা নিজের মধ্যে সবসময় রাখার চেষ্টা করব… চার বছরে দর্শকদের এই ভালোবাসাটাও আমার মধ্যে আজীবন থাকবে’।