চাঁদা তুলে যদি উৎসব হতে পারে, সিনেমা কেন নয়! পরিচালক উজ্জ্বল বসুর এই ভাবনার বাস্তবতার নাম ‘দুধপিঠের গাছ’। যার প্রযোজক নদিয়ার আড়ংঘাটা গ্রামের ৯৩০টি পরিবার এবং দেশ–বিদেশের ১৯৬ জন সিনেমাপ্রেমী মানুষ। ক্রাউডফান্ডিং বা গণ অর্থায়নে নির্মিত কোনও পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি এই প্রথম প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির স্বাদ পেল। কলকাতা–সহ ভিনরাজ্যের কয়েকটি হাতে–গোনা সিনেমা হলে চলছে ‘দুধপিঠের গাছ’। মঙ্গলবার যার প্রিমিয়ার শো কোনও মাল্টিপ্লেক্সে নয়, হয়েছে খোলা আকাশের নীচে আড়ংঘাটার এক ফুটবল মাঠে। যে মানুষগুলো মন উজাড় করে ভালবেসে সিনেমাটি তৈরি করতে ২২ লক্ষ টাকা দিয়েছে তাঁরাই দু’চোখ ভরে দেখলেন তাঁদের গ্রামের গপ্পো।
আম, জামের মতো পিঠেরও নাকি গাছ হয়। দিদার কাছে জানতে পেরে মাটিতে এক পিঠে ‘রোপণ’ করে এই ছবির মুখ্য চরিত্র গৌর। তার স্বপ্নের দুনিয়ায় গাছে পিঠে ফলে। সেই অলীক চিন্তায় ভর করে একদিন সে বেরিয়ে পড়ে স্বপ্ন সত্যি করার তাগিদে। গ্রামবাংলার ছাঁচে এমনই এক কাহিনীর জাল বুনেছেন উজ্জ্বল বসু। তাঁর এবং সিনেমার সব কলাকুশলীর মতে, দর্শকরা এই গল্পের আনাচে–কানাচে তাঁদের ছোটবেলার স্বাদ ফিরে পাবেন। রয়েছে গ্রামীণ জীবনের আর্থিক টানাপোড়েন। আর তার মধ্যেই রয়েছে বেঁচে থাকার তাগিদ।
পরিচালক আড়ংঘাটারই বাসিন্দা। আড়ংঘাটা উপেন্দ্র মোমোরিয়াল ইন্সটিটিউশনের প্রাক্তন ছাত্র তিনি। এই গ্রামের পটভূমিকায় ছবি জানতে পেরে তাঁর পাশে সব দিক থেকে দাঁড়িয়েছেন এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষিকা, এলাকার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী–সহ মোট ৯৩০টি পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ। ছবিটি বানানোর জন্য তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন ২২ লক্ষ টাকা।
গৌরের মায়ের ভূমিকায় রয়েছেন অভিনেত্রী দামিনী বেণী বসু। তিনি বলছিলেন, ‘গ্রামের সকলে প্রাণ খুলে সবটা করেছেন। শুটিংয়ের জন্য, থাকার জন্য নিজেদের ঘরবাড়ি, উঠোন দিয়েছেন। খাওয়া–দাওয়া থেকে সবরকম যত্নআত্তি করেছেন কাছের মানুষের মতো। ওঁরা না থাকলে এই সিনেমা হয়তো হত না। ওদের চলন, বলন, কথার ধরণ রপ্ত করে নিজের চরিত্রকে আরও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।’ মুখ্যচরিত্র গৌরের ভূমিকায় অভিনয় করেছে শিশুশিল্পী হর্ষিল দাস। সে ছাড়া এই সিনেমায় রয়েছে প্রায় ৪৫ জন খুদে। সকলেই আনকোড়া। আর সকলের বাড়ি আড়ংঘাটা–সহ আশপাশের গ্রামে। গ্রামের অন্য বাসিন্দারাও অভিনয় করেছেন এই সিনেমায়। দেখুন ট্রেলার—
ছবির চিত্রগ্রহণে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলছিলেন, ‘ছোটদের অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ। ওরা যেন ক্যামেরার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নিয়েছিল।’ ছবির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন জয় সরকার। তাঁর সঙ্গীতই বাজবে ‘দুধপিঠের গাছ’–এর আবহে। তাঁর কথায়, ‘আমার সৌভাগ্য যে আমি এমন এক সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছি।’ দর্শকদের কাছে সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখার আবেদন করেছেন পরিচালক সৃজিত মুখার্জি, দেবাশিস সেন শর্মা, ইন্দ্রাশিস আচার্য, প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যরা। কারণ, পুজোর মরশুমে অনেক বড় বড় ছবি রিলিজ করেছে। তার মাঝে সামান্য জায়গা পেয়েছে গ্রামবাংলার এই কাহিনী। পুজোর এই ৫ দিন প্রেক্ষাগৃহে দর্শক না এলে উঠে যেতে পারে সিনেমাটি। ‘শহরের মাল্টিপ্লেক্স–সহ যে সব হলে ছবিটি রিলিজ করছে পারলে সেগুলি ভরিয়ে দিন’— দর্শকদের কাছে আবেদন ছবির সম্পাদক অনির্বাণ মাইতি, অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়দের।