করোনার দ্বিতীয় ঢেউ-এর প্রকোপ জাঁকিয়ে বসেছে টলিপাড়ায়। আক্রান্ত হয়েছেন একের পর এক অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল অভিযোগ তুলেছিলেন করোনাবিধি সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। চৈতির কো-স্টার জিতু কমলের কন্ঠেও শোনা গিয়েছিল একই অভিযোগ। প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও চাপা গলায় অনেকেই জানিয়েছেন স্টুডিও পাড়ার গা ছাড়া মনোভাবের কথা।
করোনাবিধি শুধুই খাতায়-কলমে রয়ে গিয়েছে অনেক সেটে। মুখে মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকে, কেউ আবার সুস্থতা চেপে কাজ করছেন। এবার গোটা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুললেন টলিগঞ্জের অন্যতম সিনিয়র অভিনেত্রী ইন্দ্রানী হালদার, মানে শ্রীময়ী। শট দেওয়ার সময় মাস্ক খুলতে বাধ্য অভিনেতারা, তাই তাঁদের প্রাণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। অভিনেত্রী আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে ফেডারেশনকে একহাত নিয়েছেন। তিনি জানান, ‘ত বছর লকডাউনের পরে যে নিয়মের গণ্ডির মধ্যে শুটিং শুরু হয়েছিল, সেই নিয়মগুলো ফিরিয়ে আনা খুবই দরকার। কিন্তু আনবে কে?’ ভোটের ফল না মিটলে কিছুই করা সম্ভবপর নয়, আক্ষেপের সুরে বলেন অভিনেত্রী। কারণ তাঁর কথায়, ফেডারেশন ‘প্রযোজক-চ্যানেলের মন জুগিয়ে চলছে, কলাকুশলীরা মরল না বাঁচল, তাতে কিছু আসে যায় না ওদের'। যদিও শ্রীময়ীর সেটে কিন্তু কড়া নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন ইন্দ্রানী হালদার। ফ্লোরে টেকনিশিয়ানরা মাস্ক বা ফেসশিল্ড পরে না থাকলে, শ্যুটিং না করবার কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন ইন্দ্রানী হালদার। তবে পাশের সেটেগুলোতেই বেহাল দশা নজর এড়ায়নি তাঁর। অভিনেত্রী একথাও বলেন, প্রত্যেক শিল্পীর নিরাপত্তা নিজের হাতেই। নিজেদের আরও সচেতন হতে হবে।
শাসকদল ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রী হিসাবে পরিচিত ইন্দ্রানী হালদার, তবে এবছর নির্বাচনী প্রচার মঞ্চ থেকে গায়েব ছিলেন তিনি। অভিনেত্রী পরিষ্কার জানান, ‘রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে চাই। আমি অভিনয় করি, সেটাই যথেষ্ট’।
শুক্রবার রাজ্যে আংশিক লকডাউন ঘোষিত হয়েছে। সিনেমা হল বন্ধ, তবে শ্যুটিং নিয়ে অবশ্য কোনওরকম নির্দেশিকা আসেনি রাজ্য সরকারের তরফে। দু-দিন আগেই করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন স্টুডিওপাড়ার নামী টেকনিশিয়ান বিশুদা (সুকান্ত চক্রবর্তী)। গত সপ্তাহেই কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাবাডি কাবাডি’ ছবির শ্যুটিং সেরে বোলপুর থেকে ফিরেছিলেন প্রয়াত টেকনিশিয়ান। ফেডারেশনের তরফে এই নিয়ে তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকা হলেও, তাতে ডাক পায়নি আর্টিস্ট ফোরাম। যদিও উপস্থি ছিল চ্যানেল হেড, প্রোডিউসার গিল্ডের সদস্যরা। তাই নিয়ে ফেডারেশনের সঙ্গে আর্টিস্ট ফোরামের মনোমালিন্যের ছবিটা বেশখানিকটা সামনে এসে পড়েছে। ক্ষুদ্ধ শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়ের দাবি, আর্টিস্টরাই তো সবচেয়ে বেশি রিস্ক নিয়ে কাজ করছে!
ফেডারেশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আগামী ৩-রা মে থেকে করোনা লকডাউন পরবর্তী সময়ে বলবত্ সবনিয়মবিধি ফের লাগু হবে সেটে। টেকনিশিয়ানদের করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হবে। তাঁরা যাতে ভ্যাকসিন পায়, সেটিও নিশ্চিত করা হবে।