বলিউডে পা রাখার পরই একটার পর একটা সফলতা। মাত্র ২৮ বছর বয়সে একাধিক হিট ছবি রয়েছে অভিনেত্রী আলিয়া ভাটের ঝুলিতে। তালিকায় রয়েছে রাজি, উড়তা পঞ্জাব, হাইওয়ে, কাপুর এন্ড সন্স এবং টু স্টেটসের মতো কমার্সিয়াল ভাবে সফল সহ একাধিক ছবি।
অভিনেতা রণবীর কাপুরের সঙ্গে সম্পর্কের দরুন সংবাদের শিরোনামে থাকে আলিয়ার ব্যক্তিগত জীবনও।পরিচালক মহেশ ভাট এবং তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী সোনি রাজদানের ছোট মেয়ে আলিয়া। তবে আলিয়ার পরিবারের সম্পর্কে আমাদের অনেকেই অজানা। আলিয়ার রক্তে রয়েছে কাশ্মীরী, গুজরাতি, জার্মান এবং উত্তরপ্রদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যোগ। সোমবার অভিনেত্রীর জন্মদিনে পিছন ফিরে দেখা যাক।
বলিউডে অত্যন্ত জনপ্রিয় ভাট পরিবার। পরিবারের পিতৃপুরুষ নানাভাই ভাট ছিলেন গুজরাতের কাথিয়াবাড় থেকে আসা পোরবন্দরের হিন্দু নগরের ব্রাহ্মণ। কাল্পনিক এবং পৌরাণিক ছবি তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিলেন তিনি। ভারতীয় ছবিতে ‘দ্বৈত’ শব্দের ব্যবহার শুরু হয়েছিল তাঁর হাত ধরে। তাঁর প্রথম ছবি ‘মুকাবলা’(১৯৪২ সাল) তে নাদিয়াকে ‘নির্ভীক’ ভালো বোন হিসেবে এবং অপরদিকে গুন্ডা হিসেবে দেখিয়েছিলেন ছিলেন।
শিরিন মহমম্মদ আলি (মহেশ ভাটের মা)-র সঙ্গে দীর্ঘদিন সম্পর্কে ছিলেন মহেশের বাবা নানাভাই ভাট। এরপর অপর এর মহিলাকে বিয়ে করেন নানাভাই। লখনউ-এর এক ইসলাম ধর্মাবলম্বী ‘শিয়া’ ছিলেন শিরিন। একে অপরকে অনেক ভালবাসলেও, নানাভাই কোনওদিনই বিয়ে করতে রাজি হননি তাঁকে। বাবা-মায়ের ভাঙাচোরা সম্পর্ক নিয়ে বেশ খারাপ একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন মহেশ। জখম(১৯৯৮) ছবির মাধ্যমে বাবা-মায়ের সম্পর্ককে পর্দায় তুলে ধরেছিলেন তিনি। চল্লিশ, পঞ্চাশের দোরগোড়ায় শিরিনের বোন এবং মহেশের কাকিমা পূর্ণিমা (জন্মসূত্রে মেহেরবানো মহম্মদ আলি) সফল অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি অভিনেতা ইমরান হাশমির ঠাকুমাও।
হিন্দুস্তান টাইমসে দেওয়া পুরনো এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক তাঁর মায়ের সম্পর্কে মহেশ ভাট জানিয়েছিলেন, কীভাবে মায়ের হাত ধরে বড় হয়েছেন তিনি। পরিচালকের কথায়, ‘আমি জানি না বাবার মানে আসলে কী, আমার কাছে তেমন কেউই ছিল না। আমার সঙ্গে বাবার কোনও স্মৃতি নেই, তাই বাবার ভূমিকা কী হওয়া উচিত তা সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। আমি মুসলমান মা শিরিন মহম্মদ আলির-র বেজন্মা সন্তান’।
বাবা-মায়ের সম্পর্কের যোগের পাশাপাশি আলিয়ার মামার বাড়ির যোগও ভিন্ন। সোনি রাজদানের মা জার্মান মহিলা ছিলেন। তাঁর নাম গার্ট্রুড হোলজের ( Gertrude Hoelzer)।পাশাপাশি সোনির বাবা কাশ্মীরি পন্ডিত সম্প্রদায়ের, তাঁর নাম নরেন্দ্র নাথ রাজদান। লন্ডনে আর্কিটেকচার পড়ার সময় নরেন্দ্রর সঙ্গে গার্ট্রুডের পরিচয় হয়। সোনির জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে। পরে ভারতে আসেন তিনি। এই কারণে তাঁর ব্রিটিশ নাগরিকত্ব রয়েছে, এমনকি আলিয়া ভাটও ব্রিটিশ নাগরিক। সোনির বাবা একজন দক্ষ বেহালাবাদক ছিলেন, মিউজিকের মাধ্যমেই তাঁদের ভালবাসা গাঢ় হয়।
বাবা-মায়ের রোম্যান্টিক সম্পর্ক নিয়ে বলতে গিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোনি রাজদান জানিয়েছিলেন, ‘দক্ষ বেহালাবাদক হিসেবে ইহুদি মেনুইনের কাছে প্রশংসিত হয়েছিলেন বাবা। ধ্রুপদী ক্লাসিকাল ভারতীয় নৃত্যশিল্পী রাম গোপালের ছাত্র হিসেবে তাঁদ দলের সঙ্গে সারা ইউরোম ভ্রমণ করেছেন বাবা। লন্ডনের একটি কনসার্টে বাবা একজনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেই সময়, যেহেতু তাঁর সেটা করতে পারবে না, তাই তাঁরা মাকে একটা পাস দিয়ে বলেছিলেন শো-এর পর স্টেজের পিছনে গিয়ে মিস্টার রাজদানের সঙ্গে দেখা করে ধন্যবাদ জানাতে। এভাবে প্রথমবার যখন তাঁদের দেখা হয়, বাবা মা’কে কফির জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন....’।
এরপরই সোনি জানান, তাঁর মা মুম্বই চলে আসেন এবং সেখানে এসে নার্সারি স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগ দেন। মুম্বইতেই তাঁর মা ঘর নিয়ে থাকতে শুরু করেন।
আলিয়া এবং শাহিনকে অবশ্য খুব কমই তাঁর মামা বাড়ির দিকের দাদু এবং ঠাকুমার সঙ্গে ছবি পোস্ট করতে দেখা যায়। দাদু-ঠাকুমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছবি পোস্ট করেছিলেন আলিয়া এবং শাহিন।