সাংসদ হিসেবে মিমি চক্রবর্তী নিজের ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। রাজনীতি যে তাঁর জন্য নয়, সে কথাও বলেছিলেন। আর শেষপর্যন্ত ২০১৯ সালে যাদবপুর কেন্দ্রে জয়ী মিমি চক্রবর্তীকে এবার লোকসভা ভোটে টিকিট দিল না তৃণমূল কংগ্রেস। মিমিকে সরিয়ে নিয়ে আসা হল সায়নী ঘোষকে। রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে সায়নীর নাম ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা।
একুশের বিধানসভা ভোটে আসানসোল দক্ষিণ আসনে জোড়াফুলের প্রার্থী হয়েছিলেন সায়নী। তবে হেরে যান তিনি বিজেপির অগ্নিমিত্রা পলের কাছে। এবারে আর আসনসোলে টানা হল না তাঁকে। আসানসোল লোকসভা আসনের দায়িত্ব পেলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। যিনি উপনির্বাচনে জিতে ওখানের সাংসদ বর্তমানে। আর কলকাতার অন্যতম গুপুত্বপূর্ণ অঞ্চল যাদবপুরের টিকিটে এলেন সায়নী।
সায়নী বর্তমানে দলের যুব সংগঠনের সভানেত্রী। ডাকাবুকো স্বভাব, বিতর্কিত মন্তব্য, জান লড়িয়ে দলের জন্য কাজ করে সায়নী ধীরে ধীরে জায়গা করে নিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে।
২০১৫ সালে সায়নী ঘোষের টুইটার হ্যান্ডেল (বর্তমান এক্স) থেকে একটি গ্রাফিক শেয়ার হয়েছিল। যাতে ছিল একটি শিবলিঙ্গের ছবি। তাতে কন্ডোম পরাচ্ছিলেন এডস সচেতনতার বিজ্ঞাপনের ম্যাসকট ‘বুলাদি’। পরে অবশ্য অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল। তিনি দেখার পরে ওই পোস্টটি ডিলিট করে দেন।
তবে সায়নী বিতর্ককে যতই থামানোর চেষ্টা করুক, বারবার তাঁকে ঘিরে উসকে উঠেছে ট্রোলাররা। ইতিমধ্যেই সায়নী ঘোষকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে জেরা করছে ইডি।
একসময় কিন্তু এই সায়নীই সিপিএম ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। চলচ্চিত্র পরিচালক অনীক দওর সিনেমা 'ভূতের ভবিষ্যত' তখন তৃণমূলের বিষ নজরে। রাজ্যের বিভিন্ন হল থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে পলিটিক্যাল স্যাটায়ারটি। সেই সময় সারাসরি মমতার দিকে আঙুল তুলেছিলেন সায়নী। বলেছিলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় পদ্মাবত-এর হামলার বিরোধিতা করেছিলেন এবং বাংলায় সিনেমাটি প্রদর্শনের জন্য প্রযোজকদের সমস্ত নিরাপত্তার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। তাহলে কেন তাঁর বাংলতে বাংলা সিনেমার প্রতি এমন আচরণ?’
তবে সেই সায়নীই যেন রাতারাতি এলেন তৃণমূলে। এলেন শুধু না, থেকও গলেন। যখন অন্য অভিনেত্রী-নায়িকারা ভোটে হেরে সরে যান দল থেকে, তিনি সেখানে কেরিয়ারই ছেড়ে দিলেন একপ্রকার। নিজেকে সেভাবে আর সিনেমা-সিরিজের দুনিয়াতেই রাখলেন না। ধীরে ধীরে হয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরের মেয়ে। আর এতটাই আপন যে দিদিও নিশ্চিন্তে মিমিকে সরিয়ে যাদবপুরের মতো একটা অঞ্চল দিয়ে দিলেন সায়নীর হাতে।
এই তো দু দিন আগেই তিনি প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে বলেন, ‘গোমূত্র দিয়ে কুলকুচি করে এসে রায় দিতেন বিচারপতি!’ ভোটের আগে এরকম আরও কিছু বাণী কি শোনাবেন তিনি, আপাতত তাই আলোচনা নেটমহলে।