একটা সময় জমিয়ে রেখেছিলেন টলিউড ইন্ডাস্ট্রি প্রায় একাই। তিনি আর কেউ নন, সুচিত্রা সেন। এখনও তাঁর সৌন্দর্য চোখ কপালে তোলে আট থেকে আশির। তাঁর অভিনীত বাংলা কালজয়ী সিনেমাগুলিকে মিস করতে চান না দর্শকরা। জন্মের সময় বাড়ির লোক নাম রেখেছিলেন কৃষ্ণা। তবে সেই কৃষ্ণা স্কুলে ভর্তি হলে, নাম বদলে হয় রমা। আর পরবর্তীতে সুচিত্রা সেন হিসেবে লক্ষ্য মানুষের হৃদয়ে হয় আট থেকে আশির।
২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি মারা যান সুচিত্রা সেন। তাঁকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি যে চর্চা চলে বর্তমানে, তা হল শেষ বয়সে কেমন দেখতে হয়েছিল মহানায়িকাকে! নিজেকে একপ্রকার সকলের অন্তরালে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই আগল ভেঙে প্রবেশের অধিকার ছিল না পরিবার ও পরিচিত ছাড়া কারওর।
তবে কেন তাঁর এই সিদ্ধান্ত জানা যায় না। সুচিত্রা ১৯৯৫ সালে একবার ভোটের কার্ডের জন্য নিজের ছবি দেন। তবে সেই শেষ। এমনকী, ২০০৪ সালে যখন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়া হল তাঁকে, সেটাও আনতে যাননি। কেন সব লাইমলাইট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন, তা এখনও অজানা সকলের।
সুচিত্রা সেনের বোনঝিকে একবার বলতে শোনা গিয়েছিল, কেমন দেখতে হয়েছিল শেষ বয়সে তাঁর মাসিকে। লগ্না ধর, সুচিত্রার সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান টিভি৯বাংলাকে, ‘কেউ যদি বলে, মাসির চেহারা শেষ বয়সে খারাপ হয়েছিল। তাহলে খুব ভুল বলেছেন। সাদা চুলেও মাসি ছিলেন সুন্দরী। এছাড়া সেই গ্রেসটা তো ছিলই।’
লগ্না আরও জানান, মাসিকে কখনও রান্নাঘরের ধার ঘেঁষতে হত না। কারণ, রাঁধুনি ছিল। তবে তাঁকে একবার ডিমের ডালনা রেঁধে খাইয়েছিলেন। আশেপাশের অনেকে সুচিত্রার এভাবে অন্তরালে চলে যাওয়া নিয়ে সমালোচনা করলেও, বাড়ির লোকেরা সম্মান দিয়েছিলেন তাঁর এই সিদ্ধান্তে।
‘জানি না ঠিক কোন কারণে মাসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের মানুষ হিসেবে আমরা প্রত্যেকে সমর্থন করেছিলাম। সব তারকা মধ্যগগনে থাকার পর এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কিন্তু মাসি পেরেছেন। াঁর দর্শকরাও তাঁকে সেই জায়গাতেই রেছেখে চিরটাকাল।’
তার প্রথম সিনেমা যা মুক্তি পেয়েছিল, তা হল ১৯৫৩ সালে সুকুমার দাশগুপ্তের সাত নম্বর কায়দি। দেবকী কুমার বসু তাঁর ভগবান শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য ছবিতে বিষ্ণুপ্রিয়া চরিত্রে কাস্ট করেন সুচিত্রাকে তার পরের বছরই। আর সেই ছবিতে অভিনয়, তাঁকে পরিচিতি দেয় সকলের কাছে।
১৯৬৩ সালে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি সাত পাকে বাঁধা ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে রুপো জিতেছিলেন। ১৯৭২ সালে, তিনি ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রীতে ভূষিত হন। ১৯৭৯ সাল থেকে, তিনি সকল প্রকার যোগাযোগ পরিহার করলেন; এর জন্য তাঁকে প্রায়ই গ্রেটা গার্বোর সঙ্গে তুলনা করা হয় । ২০০৫ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন, যা ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার, জনসাধারণের দৃষ্টির বাইরে থাকার জন্য। ২০১২ সালে, তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান বঙ্গ বিভূষণ দেওয়া হয়।