সদ্যই পালিত হল আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। রবিবার ১৯ নভেম্বর ছিল সেই দিন। কিন্তু কেন এই দিন পালিত হয়, কীই বা এর গুরুত্ব সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। এমনকি তাঁর সেই পোস্টে কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না পুরুষদের।
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস নিয়ে কী বললেন তসলিমা নাসরিন?
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের ইতিহাস খুঁড়ে এদিন তসলিমা তাঁর পোস্টে জানান পুরুষদের জন্য এই বিশেষ দিনটি বানিয়েছেন টমাস ওস্টার নামক এক ভদ্রলোক যিনি পুরুষ অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। লেখিকার মতে এই দিনটি এখন নিয়ন্ত্রণ করেন একদল নারী বিদ্বেষী পুরুষ। তিনি একই সঙ্গে তীব্র বিরোধিতা করেন আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের। তাঁর মতে পুরুষরা কখনও পুরুষ হওয়ার জন্য অত্যাচারিত হন না যেটা নারীরা হন, তাই এই দিবস অর্থহীন।
আরও পড়ুন: সৌরভের নাম ভাঙিয়ে ভিনরাজ্যে সুবিধা নিচ্ছেন বহু বাঙালি! দাদা বললেন, 'কতজন যে এভাবেই...'
তসলিমা নাসরিন এদিন তাঁর পোস্টে লেখেন, 'আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস' নামে একটা দিবস বানিয়েছে 'পুরুষ অধিকার আন্দোলন' MRA (Men's Rights Activists) -এর সঙ্গে যুক্ত একটি লোক। টমাস ওস্টার নাম। বানানো এই দিবসটি এখন পুরোপুরিই পুরুষ অধিকার আন্দোলনের এক পাল ভয়ঙ্কর নারীবিদ্বেষী কর্মীর নিয়ন্ত্রণে। এই দিবস প্রথম উদযাপিত হয় ভারতে, ২০০৭ সালে। ভারতের কিছু লোক নারীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে, সংসদ থেকে নারী কোটা বাতিল করার, নারী নির্যাতন আইন বিলুপ্ত করার, পণ প্রথা বহাল রাখার, ধর্ষণের জন্য ধর্ষককে নয়, নারীদের দোষ দেবার দাবি জানিয়ে 'পুরুষ দিবস' পালন করে।'
তিনি আরও লেখেন, 'আজকে নাকি পুরুষ দিবস? কী করতে? আমি তো জানতাম যারা নির্যাতিত, অত্যাচারিত, উপেক্ষিত, তারা যেন তাদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়াবার জন্য একটি দিবস পায়, সে কারণেই দিবস-টিবসের চর্চা চলে। সে কারণেই নারী, শিশু, আদিবাসি, পঙ্গু, প্রতিবন্ধী, দরিদ্র, বাবা-মা, শিক্ষক, জীব জন্তু ইত্যাদির জন্য দিবসের আয়োজন করা হয়েছে। পুরুষ অর্থাৎ লর্ড, কিং, রাজা, বাদশাহ, অত্যাচারী, নির্যাতক, ধর্ষক কী করবে দিবস দিয়ে? দুনিয়ার সব অধিকার তাদের। আরও অধিকার চাই? পুরুষেরা দল বেঁধে আজ সিদ্ধান্ত নিক, তারা মানুষ হবে, তারা পুরুষতন্ত্রকে জ্যান্ত কবর দেবে। তা না হলে, খুব ভাল করেই জানি, এই পুরুষ দিবস শুধু টক্সিক মাসক্যুলিনিটিকে আরও উস্কে দেওয়ার জন্য। যদি পুরুষ দিবস পালন করা হয় পুরুষের দম্ভ, চতুরতা, নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা, নির্যাতন, নারীবিদ্বেষ নিশ্চিহ্ন করার জন্য, নিদেনপক্ষে কমানোর জন্য, তাহলে এই পুরুষ দিবসকে সভ্য নারী-পুরুষ মেনে নেব, নচেৎ নয়।'
কে কী বলছেন?
এক ব্যক্তি লেখেন, 'পুরুষরা পুরুষ হওয়ার কারণেই অনেক ফল্স 498A খেয়ে যায়।নারীদের পক্ষে কথা বলছেন, ভালো। নিঃসন্দেহে নারীদের সমানাধিকারের প্রশ্নে এখনও অনেক পথ হাঁটা বাকি। কিন্তু পুরুষ মাত্রেই তাকে সর্বদা এবং সবক্ষেত্রে প্রিভিলেজড ভাবাটা বালখিল্যতা। এতে বরং নারীর সমানাধিকার আন্দোলনই একদেশদর্শীতা দোষে দুষ্ট হয়ে গুরুত্ব হারায়। এ বিষয়ে আরো ম্যাচিওরড অবস্থান কাম্য।' আরেকজন লেখেন, 'দিদি, অবশ্যই কমবেশি সকল নারীকেই নারী হওয়ার জন্যে অবহেলিত হয়। এই জন্যে আমাদের দেশে বেশ কিছু আইন আছে। আমাদের কাছে অনেক উদাহরণ আছে, যেখানে অনেক ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফেঁসে জেল খাটতে হয়েছে, তার ক্যারিয়ার নষ্ট হয়েছে, সমাজে তার সন্মান নষ্ট হয়েছে। পরে যদিও সে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে, তাও তাদেরকে তাদের পরিবারকে সমাজ ঠিক ভাবে মেনে নেয়নি।'
অনেকে যেমন তাঁকে কটাক্ষ করেছেন, তেমনই অনেকেই আবার তাঁকে সমর্থন করেছেন। এক ব্যক্তি লেখেন, 'নারী না থাকলে কি পুরুষ দুনিয়ায় আসতো? এখানেই তো পুরুষদের প্রথম হার!' আরেকজন লেখেন 'নারীরা পুরুষের চাইতে অনেক বেশি জ্ঞান রাখে, কিন্তু পুরুষরা পুরুষ হওয়ার জন্যে সমাজ ধরেই নিয়েছে 'পুরুষ' মানেই সব জানবে। মহিলাদের আবার কোনও মতামত থাকতে পারে নাকি? নারীদের চেষ্টা চালিয়েই যেতে হবে, একদিন ভাঙবে সব'