বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়ে না! বলা যেতে পারে বিতর্ক আর তসলিমা মুদ্রার ওপিঠ-ওপিঠ। কিন্তু মনের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখতে বরাবরই নির্ভীক তিনি। ধর্মের ধ্বজাধারী হোক বা ট্রোলার কাউকেই ভয় পান না তিনি। এবার সাম্প্রতিক সময়ের চর্চিত টপিক নিয়ে মনের কথা লিখলেন তসলিমা নাসরিন। আরও পড়ুন-তিন তিনটে বিয়ে টেকেনি! লাল বেনারসিতে বাঙালি কনের সাজে অন্যতম বিতর্কিত বাঙালি, চিনলেন?
আপতত সোশ্যাল মিডিয়ায় চর্চার কেন্দ্রে কাঞ্চন মল্লিক ও অনুপম রায়ের তিন-তিনটে বিয়ে। অন্যদিকে বাংলাদেশেও ট্রেন্ডিং ৬০ বছরের মোস্তাকের সঙ্গে ১৮ বছরের তরুণী তিশার বিয়ে! কাঞ্চন-শ্রীময়ীর বয়সের বিরাট ফারাক নিয়েও কম আলোচনা চলছে না। এবার কারুর নাম না করেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে একহাত নিলেন ‘লজ্জা’র স্রষ্টা।
ফেসবুকের দেওয়ালে তসলিমা লেখেন, ‘বিয়ের ধুম পড়েছে। পূর্ব পশ্চিম দুই বাংলাতেই। লক্ষ্য করলাম, পুরুষের ভাগ্য আল্লাহ এবং ভগবানের কৃপায় অতিশয় সুপ্রসন্ন। পুরুষের যত বয়স বাড়ে, তত তাদের জীবন মধুর থেকে মধুরতর হয়ে ওঠে। তাদের প্রথম বউয়ের চেয়ে দেখা যায় দ্বিতীয় বউ বেশি ইয়ং এবং বেশি সুন্দরী, দ্বিতীয় বউয়ের চেয়ে তৃতীয় বউ আরও বেশি ইয়ং এবং আরও বেশি সুন্দরী। মেয়েদের বেলায় উল্টো, যত বয়স বাড়ে, তত নিরাপত্তাহীনতা বাড়ে, তত একাকীত্ব বাড়ে। আল্লাহ এবং ভগবানের প্রশ্রয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যতদিন টিকে থাকবে, নারী পুরুষের সমানাধিকার ততদিন মাচায় তোলা থাকবে’।
তসলিমা নিজেও তিনবার বিয়ে করেছেন, তবে সংসার টেকেনি। তাঁর সাফল্য, তাঁর কর্মজীবন সবকিছু ম্লান হয়ে যায় তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কাছ, খানিক আফসোস তাঁর। অপর এক ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে বড় ইন্টেলেকচুয়াল’ সলিমুল্লাহ খান সাহেবের ব্যক্তিগত জীবনের কিছু তথ্য তুলে ধরেন তিনি। তসলিমার অভিযোগ, উইকিপিডিয়ায় শুধু খান সাহেবের অ্যাচিভেন্টের উল্লেখ রয়েছে। লেখা নেই, তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী কিংবা সন্তানের কথা। উল্লেখ করা হয়নি, ‘তাঁর ডিভোর্স হয়ে গেছে মহিলার সঙ্গে, কিন্তু সন্তানের সঙ্গে তো ডিভোর্স হয়নি। সন্তানের নাম পর্যন্ত নেই কোথাও। সন্তানের কোনও দায়িত্ব যে তিনি পালন করেন না, সেই তথ্যও নেই। লোকেরা তাঁকে চিরকুমার বলে ডাকে, তিনি কাউকে কি ভুল শুধরে দেন?’
এরপর নিজের প্রসঙ্গে টেনে তসলিমা বলেন, তাঁর সব ডিগ্রি, পুরস্কার তুচ্ছ হয়ে গিয়েছে তাঁর তিনটে বিয়ের সামনে। আফসোসের সুরে জানান, ‘আমার উইকিপিডিয়া জুড়ে শুধু লেখা কটা বিয়ে আমি করেছি, কাকে বিয়ে করেছি, কবে করেছি, কবে ডিভোর্স দিয়েছি’।
তিনি মনে করান, সলিমুল্লাহ খানের সঙ্গে নিজের তুলনা করছেন না। শুধুমাত্র নারী এবং পুরুষের উইকিপিডিয়ার তথ্যের ফারাকের কথা বোঝাতেই বিষয়টা খোলসা করে বললেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘ভাবছি যারা তথ্য দেয়, তাদের মাথায় কী কাজ করে নারীর বেলায়, কী কাজ করে পুরুষের বেলায়?’
বিয়ে তাঁর জীবনের অতি গুরুত্বহীন ঘটনা বলে জানিয়ে তসলিমা লেখেন,'সত্যি বলতে বিবাহিত জীবন আমি যাপন করিনি, আমি যদি না চাই কতগুলো পুরুষের নাম অযথা আমার নামের সঙ্গে জড়াতে, আমার কি ক্ষমতা আছে সেই নামগুলো উইকিপিডিয়া থেকে ডিলিট করার? নেই। আমি বেশ কয়েকবার এডিট করেছিলাম, সঙ্গে সঙ্গে কে বা কারা যেন পুনরায় বসিয়ে এসেছে নাম। কী অদ্ভুত এই দুনিয়া!'