বিতর্ক তাঁর নামের সমার্থক! ব্যক্তিগত জীবন হোক বা পেশাদার জীবন, কন্ট্রোভার্সি তাঁর নিত্যসঙ্গী গত তিন দশক ধরে। পরনে লাল বেনারসি, গা ভর্তি সোনার গয়না, কপালে লাল টিপ আর চন্দন, খোঁপা বাঁধাচুলে নতুন কনের সাজে ভারী মিষ্টি লাগছে তাঁকে।
কাজল কালো চোখেই মন আটকাবে সবার। ১৯৮৫ কিংবা ৮৬ সালে তোলা এই ছবিটি দুই বাংলার এক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের। তাঁর কলমে আগুন ঝড়ে। রাখঢাক রাখতে কোনওদিন ভালোবাসেন না তিনি, এর জন্য দেশছাড়া হয়েছেন। তাতেও থোড়াই কেয়ার! এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন কার কথা হচ্ছে? চলুন আরেকটু খোলসা করা যাক।
এই বাঙালি মুসলিম লেখিকা তাঁর কলমের জন্য সুপ্রসিদ্ধ হলেও একজন চিকিৎসকও। বর্তমানে নয়া দিল্লিতে থাকেন, তবে আদপে তিনি ওপার বাংলার মানুষ। হ্যাঁ, উপরের এই ছবি ‘লজ্জা’ খ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের। যদিও কনের সাজে ছবি দিলেও এদিন তসলিমার বিয়ের ছবি নয়, সে কথা নিজেই জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকার ইন্দিরা রোডে তোলা চার দশক পুরোনো এই ছবি নিয়ে তসলিমা লেখেন,'না, সেদিন আমার বিয়ে হয়নি। ঘটা করে বিয়ে আমি করিনি কোনওদিন। তবে ইচ্ছে হয়েছিল লাল বেনারসি পরে সাজতে। সেজেছিলাম।'
জানা যায়, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময়ই তসলিমা রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহকে বিয়ে করেন। ১৯৮১ বা ১৯৮২ সাল নাগাদ, ১৯৮৬ সালে ভেঙে যায় সেই বিয়ে। পরবর্তীতে নাঈমুল ইসলাম খানের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তবে টেকেনি সেই বিয়েও। নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই ভাঙে লেখিকার দ্বিতীয় বিয়ে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই মিনার মাহমুদকে বিয়ে করে নেন তাসলিমা। তবে সেই বিয়েও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
তসলিমার এই পোস্টে মন্তব্যের বন্যা। অনেকের মতেই এই ছবিতে তাঁকে একদম অন্যরকম, অচেনা লাগছে। একজন লেখেন, ‘কেমন যেন অন্য রকম, চেনা তসলিমা নয় তো!’ আরেক নেটিজেন লেখেন, ‘বিয়ের সাজে ভীষণ সুন্দর লাগছে।’
ফেসবুকে পোস্টে নিজের মনের কথা জোর গলায় বলতে অকুতোভয় তসলিমা। মাস কয়েক আগেই ভাঙা বিয়ে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, ‘দুটো কারণে আমি আমার মতো বেঁচে থাকতে পেরেছি। এক, নিজের টাকা নিজে কামিয়েছি, দুই, কোনও স্বামীর সঙ্গে সংসার করিনি।’ হ্যাঁ, সিঙ্গলহুড নাকি তাঁর ভালো থাকার কারণ।
তসলিমা বরাবরই সাহসী। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর একলা বাঁচাটা আজও যেখানে ব্যর্থ জীবন হিসাবেই ধরা হয়, সেখানে একরাশ মুক্ত বাতাস তসলিমা।