দিদি নম্বর ১-এর মঞ্চে আগেই ঘুরে গিয়েছেন নন্দিনী দিদি, এবার রচনার শো-তে দেখা মিলল মুনমুন দিদির। বর্ধমানের ইন্দ্রকানন থেকে সোজা জি-বাংলার দিদি নম্বর ১-এর স্টেজে এই ভাইরাল কন্যে। মাত্র ১০০ টাকায় প্রতিদিন শ'য়ে শ'য়ে মানুষকে ২ পিস মটন আর এক থালা বাসন্তী পোলাও খাওয়াচ্ছেন মুনমুন দিদি। এখানেই শেষ নয়, এই দিদির ২ পিস চিকেন-সহ চিকেন কষা আর ফ্রায়েড রাইস কিংবা বাসন্তী পোলাও-এর কম্বোর দাম মাত্র ৫০ টাকা!
রচনার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের জীবনযুদ্ধের করুণ কাহিনি বললেন মুনমুন দিদি ওরফে মুনমুন দে রাউৎ। এর জন্য ট্রোলিং-এর মুখেও পড়তে হল তাঁকে। দিদি নম্বর ১-এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে মিথ্যে কথা বলছেন, ঢপ মেরেছন তিনি, অভিযোগ নেটপাড়ার বড় অংশের। অনেকে মুনমুনের নামের পাশে ‘ঢপবাজ নম্বর ১’ তকম সেঁটে দেন।
এখন বর্ধমানের ইন্দ্রকাননের অন্যতম আকর্ষণ আয়শানি মুসুর রান্নাঘর। কী করে এই ব্যবসায় নামলেন মুনমুন দিদি? তিনি জানান, লকডাউনে তাঁর স্বামী কাজ হারায়। তারপরই সংসারের হাল ধরেন মুনমুন। তিনি বলেন, ‘সারারাত ঘুমোতে পারতাম না। তারপর হঠাৎ করেই ঠিক করি, আমি যখন রান্নাটা ভালো করতে পারি, তাহলে এটা নিয়েই এগোই। যারা কোভিড আক্রান্ত, তাঁদের যদি সার্ভিসটা দিতে পারি তাহলে আমার ভালো হবে।’ ফেসবুকে রান্না করে হোম ডেলেভারি করার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রথম দিনই ২০-২৫ জনের অর্ডার পেয়েছিলেন মুনমুনদি। শুরুতে স্বামী রাজি ছিলেন না। তাই একাই বাজারের ব্যাগ হাতে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি।
পরে অবশ্য স্বামী এসে সাহায্যের হাত বাড়ান। মুনমুন যোগ করেন, ‘প্রথম দিন দিদি আমি শুরু করেছিলাম ৩৭০ টাকা দিয়ে। মুদিখানার মাল তুলেছি। মাছ কিনেছি, মাংস কিনেছি। এমনকী ধোকার ডালনা হবে, সেটাও ওই একদিনের মধ্যে তৈরি করেছি’। এক সপ্তাহের মধ্যে কোভিড চলাকালীনই ৫০ জনের পার্টির অর্ডার পান মুনমুন, এরপরই ভাগ্য বদলে যায়।
হোম ডেলিভারির পর দেড় বছর আগে ফুড কার্ট শুরু করেন মুনমুন। এত কম টাকায় খাবার বিক্রি করায় নানান প্রশ্ন মুনমুনকে ঘিরে। তিনি বলেন, ‘চেয়েছিলাম কিছু অল্প পয়সার মধ্যে, যে জিনিস কিনতে গেলে মানুষের ৮০০ টাকা ১০০০ টাকা খরচ হয়, সেটা আমি ৫০ টাকা, ১০০ টাকায় মানুষকে আমি খাওয়াতে পারব….আমরা যেখান থেকে বাজার-দোকান করি তারাও আমাকে পাইকারি দরে জিনিস কিনতে সাহায্য করে। দূর দূর থেকে মানুষ আসছে। দোকানে ৮০০ থেকে ১০০০ জনের বাসন্তী পোলাও, ফ্রায়েড রাইস, মটন, চিকেন হয়। এছাড়া হোম ডেলিভারি আলাদা হয়। আমি দোকান খোলার আগ ১০০ জনের লাইন থাকে। জানি না কী পুণ্য করেছিলাম এতজনের ভালোবাসা পাচ্ছি’।
এই ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই নানা মুনির নানা মত। একজন লেখেন, ‘মনে হচ্ছে অন্য কোনও যুগের কথা বলছেন। ২২ জনের রান্না ৩৭০ টাকায়! মাছ-মাংস, বাজার-দোকান সব হয়ে গেল’। আরেকজন লেখেন, 'লকডাউনে বরের কাজ চলে যাওয়ায় দিদ ঘুমোতে পারত না, আর বর এমন ঘুমাতো যে ঘুম ভাঙাতে জোরে দরজা বন্ধ করতে হচ্ছে, তাও ঘুম ভাঙেনি। ঠাকুর এদের ক্ষমা করো।