২০২৪ সালে আমাদের ইকোসিস্টেম গুরুতর সমস্যায় রয়েছে, এই খবরটি সকলেরই জানা। মানুষের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, যার দরুণ পরিবেশগত অবক্ষয় বর্তমান। আর একটি নতুন গবেষণায়, সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীরা পরিবেশের ক্ষতি করে এমন শীর্ষ খাবারগুলি প্রকাশ করেছেন এবং দেখেছেন যে ভারতের ইডলি, রাজমা, চানা মসলার জনপ্রিয় খাবারগুলিও জীববৈচিত্র্যের জন্য শীর্ষ ক্ষতিকারক খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে।
আমাদের নিত্যদিনের খাদ্যাভ্যাসই জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মূল কারণ। সারা বিশ্বে ১৫১টি জনপ্রিয় খাবারের উপর গবেষণা চালিয়ে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির কারণ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রকাশ করেছেন সেই ক্ষতিকারক খাবারের তালিকাও। তাঁরা জানিয়েছেন, জীববৈচিত্র্যের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে যে খাবারটি, সেটির নাম হল লেচাজো, স্পেনের বিখ্যাত রোস্ট ভেড়ার রেসিপি। এটি ব্রাজিলেও খাওয়া হয়। ইডলি তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে এবং রাজমা (কিডনি বিন কারি) সপ্তম স্থানে রয়েছে। কিন্তু রাজমা এবং ইডলির মতো নিরামিষ খাবারগুলো কেন ‘জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকারক’ তালিকায় উঠে এসেছে? উঠছে প্রশ্ন।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসের সহযোগী অধ্যাপক লুইস রোমান ক্যারাসকো এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনিই জানিয়েছেন যে, ‘এই গবেষণায় জীববৈচিত্র্যের ফুটপ্রিন্ট আমাদের ধারণা দেয় যে আমরা সেই খাবারটি খেয়ে কত প্রজাতিকে বিলুপ্তির কাছাকাছি ঠেলে দিচ্ছি।’ গবেষণায় বিশ্বের ১৫১টি খাবারের প্রতিটির মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং কীভাবে খাবারের উপাদানগুলি ফসলের জমিতে বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি এবং উভচর প্রাণীর প্রজাতির সমৃদ্ধি এবং পরিসরকে প্রভাবিত করেছে, সেটিও দেখানো হয়েছে। স্বাদ, দাম এবং স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রেখে মানুষ খাবারের খোঁজ করেন। আর এই খোঁজ করতে গিয়ে তারা যে কত অবলা প্রাণীর জীবন সংকটে ফেলছেন, সেটা মানুষকে দেখানোই হল গবেষণার লক্ষ্য। মানুষকে নিজেদের খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী পরিবেশগতভাবে সচেতন হতে সাহায্য করে গবেষণা।
গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে যে কৃষি বাড়ানোর ফলে আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে হওয়ায় জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। আমিষ জাতীয় খাবার গবাদি পশু পালনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে চলেছে। ভারত আবার লেগুম জাতীয় খাবারের শীর্ষ উৎপাদকদের মধ্যে একটি। ভারতে ধান এবং শিম চাষ করা হয় যে জমিতে, সেগুলি আগে জীববৈচিত্র্যের অন্যতম হটস্পট ছিল, আজ চাষাবাদ শুরু হওয়ায় জীববৈচিত্র্যেরও ক্ষতি হচ্ছে। যাইহোক, সমীক্ষায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ধান এবং শিম উৎপাদন সত্ত্বেও, জনসংখ্যার একটি বড় অংশ নিরামিষ ভোজী হওয়ার কারণে ভারত সফলভাবে জীববৈচিত্র্যের সঙ্গেই সহাবস্থান করছে।