ব্রু তথা রিয়াং শরণার্থীদের স্থায়ী বাসিন্দার স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধী আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ত্রিপুরা। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে মৃত্যু হল একজনের। সাধারণ নাগরিক, পুলিশকর্মী এবং দমকলকর্মী-সহ আহত হয়েছেন প্রায় ২০ জন।
কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত ১৬ নভেম্বর থেকে কাঞ্চনপুরে যৌথ আন্দোলন কমিটির ছাতায় তলায় 'নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ' এবং 'মিজো কনভেনশন' নামে দুটি স্থানীয় সংগঠন অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাক দিয়েছে। কমিটির দাবি, শুধুমাত্র কাঞ্চনপুর মহকুমার পরিবর্তে রাজ্যের আটটি জেলায় ব্রু শরণার্থীদের বাসস্থান দিতে হবে।
প্রথম থেকেই সেই ধর্মঘট ঘিরে অশান্তির খবর মিলেছিল। জলের এক অপারেটরকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয়দের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল পুলিশ। তারপরই আমজনতার চলাচলের উপর বিধিনিষেধ চাপায় স্থানীয় প্রশাসন। তবে বিক্ষোভ চলতে থাকে। সেজন্য অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়।
যৌথ আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক সুশান্ত বিকাশ বড়ুয়া জানান, শনিবার চামঠিলা, পেছারথাল এবং পানিসাগরে 'শান্তিপূর্ণভাবে' রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু আচমকাই বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস গুলি চালায়। তাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব সিং দাবি করেছেন, বিক্ষোভকারীরা হিংসাত্মক হয়ে যাওয়ায় আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, 'কোনওরকম অনুমতি ছাড়া সকাল থেকে জাতীয় সড়ক আটকানো হয়েছে। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করলেও ওঁরা সরে যেতে চাননি। ওঁরা হিংসাত্মক হয়ে যাওয়ায় আমরা মুদৃ লাঠিচার্জ করি। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরিয়ে যান। তাঁরা অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। আত্মরক্ষায় পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়।'
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে জাতিগত সংঘর্ষের ফলে ব্রু শরণার্থীরা মিজোরাম ছেড়ে পালিয়ে আসেন। তারপর থেকে কাঞ্চনপুর ও পানিসাগর মহকুমার ছ'টি ত্রাণশিবিরে ৩২,০০০-এর বেশি শরণার্থীরা বাস করছেন। তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে চলতি বছর জানুয়ারিতে ত্রিপুরা ও মিজোরাম সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে কেন্দ্র। সেই চুক্তি অনুযায়ী, ত্রিপুরা স্থায়ী বাসস্থান পাবেন তাঁরা। একইসঙ্গে ৬০০ কোটি টাকার প্যাকেজও ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি আবার তফসিলি উপজাতির শংসাপত্রও দাবি করেন ব্রু শরণার্থীরা।