কোভিড অতিমারির ঠিক আগেই ব্লুমবার্গের মত ছিল, খুব দ্রুতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে যাবে চিনের অর্থনীতি। তাদের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি সত্যিই তাক লাগানোর মতই ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সেই চিত্রের বেশ খানিকটা বদল ঘটেছে। মার্কিন মুলুককে ছাড়িয়ে চিনের অর্থনীতি যে টেক্কা দিতে পারবে, এ বিষয়ে সন্দিহান অর্থনীতিবিদেরা। মন্দার বাজারে বেশ খানিকটা মন্থর গতিতে এগোচ্ছে চিনা অর্থনীতি এবং তা কখনওই আমেরিকাকে টেক্কা দেওয়ার মতো জায়গায় নেই।
ব্লুমবার্গের মতে, এমন পূর্বাভাস ছিল যে চিনের জিডিপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা। তবে এখন মনে করা হচ্ছে ২০৪০-এর দশকের আগে পর্যন্ত এমন কোনও সম্ভাবনাই কার্যত নেই। এবং সেটা হলেও খুব অল্প সময়ের জন্যেই হবে, তারপরেই আমেরিকা ফের এগিয়ে যাবে।
ব্লুমবার্গ ইকোনোমিস্ট জানিয়েছে যে চিনের আর্থিক বৃদ্ধির হার তাদের প্রত্যাশার থেকে অনেকটাই কম। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি গত তিন বছরে ৩ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি ঘটাতে পেরেছে। মহামারী এবং সম্পত্তিগত সংকট দেশটিকে বিপর্যস্ত করার কারণে কয়েক দশকের মধ্যে সবথেকে ধীরগতির অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটছে চিনের।
(আরও পড়ুন: Bypolls LIVE Updates: ৬ রাজ্যের ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ফল প্রকাশ আজ, কোন আসনে জিতছে কে?)
রফতানি কমে যাওয়া এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় গভীর মন্দার কারণে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কার্যত ক্ষীণ চিনের পক্ষে। ব্লুমবার্গের সমীক্ষা বলছে, ২০২৪ এ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার পাঁচ শতাংশের কম হয়ে যেতে পারে চিনে। এছাড়াও ২০৩০ এ সাড়ে তিন শতাংশ ও ২০৫০-এ এক শতাংশ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জিডিপি বৃদ্ধির হার, যা আগের পূর্বাভাসের থেকে অনেকটাই কম।
শুধু সাময়িক কিছু ইস্যু নয়। দীর্ঘমেয়াদি বেশ কিছু সমস্যাও চিনকে চাপে রেখেছে। প্রায় ৬০ বছর বাদে প্রথমবার জনসংখ্যা কমেছে দেশে। আগামী দিনে উৎপাদনে এর কোনও প্রভাব পড়বে কিনা, সেটা সময়ই বলবে। এছাড়াও বিভিন্ন নিয়ামক সংস্থার বিধিনিষেধের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমেরিকা সহ পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে সংঘাতও ব্যবসার জন্য ভালো নয়।
উল্টো দিকে আমেরিকার হাল সবাই যতটা খারাপ হবে ভেবেছিল, ততটা হয়নি। মুদ্রাস্ফীতির হার কমছে, চাকরি বাকরি পাচ্ছে মানুষ, মানুষের চাহিদাও বাড়ছে পণ্য ক্রয়ের জন্য। এর ফলে চাঙ্গা হচ্ছে অর্থনীতি, মন্দাতে চলে যাওয়ার সমস্যাও কমেছে। ২০৫০ সালেও দেড় শতাংশ হারে আমেরিকার জিডিপি বৃদ্ধি পাবে যা চিনের থেকে বেশি হবে। তবে চিনের পক্ষে এখনও অনেকগুলি ইতিবাচক ফ্যাক্টর আছে। অতবড় অর্থনীতি, টেক সেক্টরে উন্নতির সম্ভাবনা ইত্যাদির ওপর ভরসা রাখছে বিশ্ব। কিন্তু তারা কি আমেরিকাকে ছাপিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি হয়ে উঠতে পারবে। সেই সম্ভাবনা কিছুটা হলেও আগের থেকে ফিকে হয়ে গিয়েছে।