ব্রিটেনের নয়া প্রজাতির করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও কি কার্যকরী হবে কোভ্যাক্সিন? আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সেই সংক্রান্ত তথ্য পেশ করবে ভারত বায়োটেক। এমনটাই দাবি করলেন সংস্থার চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর কৃষ্ণা এল্লা।
সোমবার নয়া প্রজাতির করোনার ক্ষেত্রে কোভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে ভারত বায়োটেকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপাতত এটা শুধুমাত্র একটা অনুমান। আমায় এক সপ্তাহ সময় দিন। আমি নিশ্চিত তথ্য পেশ করব। আমি আত্মবিশ্বাসী যে তা কাজ করবে।’
সেই 'অনুমান'-এর উপর ভিত্তি করে কোভ্যাক্সিনের ছাড়পত্র পাওয়া নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার পালটা যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করেন ভারত বায়োটেকের চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর। সেই 'অনুমান' অনুযায়ী, কোভ্যাক্সিন হল ‘ইনঅ্যাক্টিভেটেড হোল ভাইরিয়ন’ টিকা। যা শুধুমাত্র স্পাইক প্রোটিন নয়, বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে। অর্থাৎ 'অনুমান' অনুযায়ী, স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তন হলেও কার্যকরী হবে কোভ্যাক্সিন। সেভাবেই ব্রিটেনের নয়া প্রজাতির করোনার বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে ভারতীয় টিকা।
তবে তারইমধ্যে ভারত বায়োটেকের কর্তার সেই মন্তব্যে নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। রবিবার কোভ্যাক্সিনকে জরুরি পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের যে ছাড়পত্র দিয়েছিলেন ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) ভি জে সোমানি, তার অন্যতম কারণ ছিল ব্রিটেনের নয়া প্রজাতির করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান। স্বভাবতই পরস্পর-বিরোধী মন্তব্য নিয়েও একটি মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
এমনিতেই ছাড়পত্র পাওয়ার পর থেকে তথ্য বিতর্কে জর্জরিত কোভ্যাক্সিন। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের পর্যাপ্ত তথ্য ছাড়াই তড়িঘড়ি কোভ্যাক্সিনকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কীভাবে, তা নিয়ে একাধিক মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেন, ‘কোভ্যাক্সিনের এখনও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল হয়নি। আগেভাগে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং তা বিপজ্জনক হতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন দয়া করে বিষয়টি স্পষ্ট করুন। পুরো ট্রায়াল শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটা এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
সেই তথ্য বিতর্কের মধ্যেই এইমসের অধিকর্তা অধিকর্তা রণদীপ গুলেরিয়া জানান, ভারতে টিকাকরণের প্রথম পর্যায়ে কোভিশিল্ড ব্যবহার করা হবে। শুধুমাত্র জরুরি পরিস্থিতিতে কোভ্যাক্সিন ব্যবহার করা হতে পারে। এমনকী সেক্ষেত্রে কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে মিলবে ক্ষতিপূরণও। নিউজ ১৮-এ তিনি বলেন, 'ব্রিটেনের করোনার নয়া প্রজাতির দাপট যদি হু হু করে বৃদ্ধি পায় বা ট্রায়াল শেষ হওয়ার পর - যেটা আগে হবে, তারপরই কোভ্যাক্সিনের ব্যবহার করা হবে।' কোভ্যাক্সিনের তথ্য নিয়ে আরও বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে ওই সংবাদমাধ্যমে গুলেরিয়া বলেন, ‘কোভ্যাক্সিন পাওয়ার পর কারও যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, তাহলে তাঁকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। যেমন ক্নিনিকাল ট্রায়ালে হয়েছে।’
তার জেরে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তাহলে কি কোভ্যাক্সিনের সুরক্ষার বিষয়ে এতটাই অনিশ্চয়তা রয়েছে? আর যদি তাই থাকে, তাহলে কেন তড়িঘড়ি অনুমোদন দিল কেন্দ্র? যদিও ভারত বায়োটেকের কর্তা দাবি করেছেন, ‘কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশেরও কম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। অন্যদের ক্ষেত্রে তা ৬০-৭০ শতাংশ হয়েছে। আমি আশ্বস্ত করতে পারি যে আমাদের টিকা ২০০ শতাংশ সুরক্ষিত।’