লোকসভা নির্বাচনে যে কচ্ছতিভু দ্বীপ বড় ইস্যু হতে চলেছে, তা সাত মাস আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর এবার তামিলনাড়ুর বিজেপি প্রধান কে আন্নামালাইয়ের আরটিআইয়ের ভিত্তিতে যে জবাব দেওয়া হল, তাতে জানানো হল যে কীভাবে শ্রীলঙ্কার হাতে ‘মা ভারতীর অংশ’ কচ্ছতিভু দ্বীপ তুলে দিয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ওই জবাব অনুযায়ী, সেইসময় ভারত সরকারের তরফে বলা হয়েছিল যে নিজের এলাকার দাবি করা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। শেষপর্যন্ত ১৯৭৪ সালে ইন্দো-শ্রীলঙ্কা সামুদ্রিক চুক্তির মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার হাতে ১৬৩ একরের কচ্ছতিভু দ্বীপ তুলে দিয়েছিল ইন্দিরা সরকার। যা নিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ শানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
আরটিআইয়ের জবাব অনুযায়ী, স্বাধীনতা লাভের পরই কচ্ছতিভু দ্বীপ নিয়ে নিজেদের দাবি জানাতে শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা (তৎকালীন সিলন)। সেইসময় শ্রীলঙ্কার তরফে বলা হয়েছিল যে দ্বীপরাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া কচ্ছতিভু দ্বীপে সামরিক মহড়া চালাতে পারবে না ভারতীয় নৌসেনা। ১৯৫৫ সালে তৎকালীন সিলন বায়ুসেনা মহড়া চালিয়েছিল কচ্ছতিভু দ্বীপে।
তারইমধ্যে ১৯৬১ সালের ১০ মে কচ্ছতিভু দ্বীপের বিষয়টি তুচ্ছ বলে অভিহিত করেছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। তিনি লিখেছিলেন, ‘এই ছোট্ট দ্বীপের ক্ষেত্রে কোনওরকম গুরুত্ব দেখতে পাচ্ছি না আমি। আর সেই দ্বীপের নিয়ে (ভারতের) দাবি তুলে নিতে কোনও আপত্তি থাকবে না আমার। অনির্দিষ্টকালের জন্য এই বিষয়টা যে ঝুলে থাকুক এবং সংসদে বিষয়টি ফের তোলা হোক, সেটা আমি চাই না।’ তবে তাঁর আমলে শ্রীলঙ্কার হাতে কচ্ছতিভু দ্বীপ তুলে দেওয়া হয়নি। বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে ইন্দিরা সরকার শ্রীলঙ্কার হাতে কচ্ছতিভু দ্বীপ তুলে দিয়েছিল। যা নিয়ে আজও তামিলনাড়ুতে তুমুল অসন্তোষ আছে।
আর সেই সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয়েছিল ভারতের একাধিক শীর্ষ আমলার মতামতের পরেও। আরটিআইয়ের জবাব অনুযায়ী, ১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল এসম সি সেতালভাদ জানিয়েছিলেন যে কচ্ছতিভু দ্বীপের বিষয়টি নিয়ে দিনের আলোর মতো স্বচ্ছতা না থাকলেও ওই দ্বীপের উপর ভারতের বেশি অধিকার আছে। ভারতের হাতেই কচ্ছতিভু দ্বীপ রাখার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন তিনি।
অন্যদিকে, ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তৎকালীন যুগ্মসচিব (আইন ও চুক্তি) কে কৃষ্ণ রাও জানিয়েছিলেন, কচ্ছতিভু দ্বীপ নিয়ে শ্রীলঙ্কা যে দাবি করছে, সেটার মজবুত ভিত্তি আছে। কিন্তু সেটার মানে এই নয় যে ভারতের কোনও দাবি নেই। কচ্ছতিভু দ্বীপে মাছ ধরার অধিকার পাওয়ার জন্য ভারতের হাতে আইনি সুযোগ আছে বলেও সওয়াল করেছিলেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তৎকালীন যুগ্মসচিব। কিন্তু ভারত কচ্ছতিভু দ্বীপ তুলে দেওয়ার পর আজও তামিল মৎস্যজীবীদের আজও ধরপাকড় করে থাকে শ্রীলঙ্কা।
মোদীর আক্রমণ
ভারতের রামেশ্বরম এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে অবস্থিত কচ্ছতিভু দ্বীপ নিয়ে গত অগস্টে কংগ্রেসকে তুমুল আক্রমণ শানিয়েছিলেন মোদী। এবার আরটিআইয়ের জবাব সামনে আসতে ফের কংগ্রেসকে তোপ দেগেছেন। তিনি বলেন, 'চোখ খুলে দেওয়া এবং চমকে ওঠার মতো বিষয়। নয়া যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে ফাঁস হয়ে গেল যে কীরকম দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে কচ্ছতিভু দান করে দিয়েছিল। যা প্রত্যেক ভারতীয়কে রাগান্বিত করে তুলেছে। আর মানুষের মাথায় এই বিষয়টি আবারও ঢুকে গেল যে আমরা কখনও কংগ্রেসকে ভরসা করতে পারব না।'