সম্প্রতি ভারত ইথানলকে কাজে লাগিয়ে জৈব জ্বালানি প্রস্তুত এবং পেট্রোলিয়ামের বিকল্প হিসাবে এটির গুরুত্ব বিশ্ব বাজারে তুলে ধরেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ আখ উৎপাদনকারী দেশ ব্রাজিলের সঙ্গে ভারত ফের নতুন বোঝাপড়ায় আসতে চাইছে। প্রসঙ্গত ভারত এবং ব্রাজিল উভয় দেশই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সহায়তায় চিনি সংক্রান্ত একটি বাণিজ্যিক বিবাদ মেটানোর জন্য আগ্রহী। দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি নয়া দিল্লির সাথে ইথানল উৎপাদন প্রযুক্তি শেয়ার করতে পারে বলে সূত্রের খবর। প্রসঙ্গত, ব্রাজিল বিশ্বের মধ্যে সর্ববৃহৎ আখ এবং চিনি উৎপাদনকারী দেশ। ইথানল উৎপাদনেও তারা প্রথম এবং ইথানল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ব্রাজিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সাম্প্রতিক অতীতে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জনৈক আধিকারিক জানান, ‘পূর্ববর্তী বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য আমরা কয়েক দফায় আলোচনা চালিয়েছি। ব্রাজিলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা আমাদের সঙ্গে ইথানল প্রযুক্তি শেয়ার করবে। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক বিষয়।’ বর্তমানে যানবাহন পরিচালনার জন্য তেলের সঙ্গে ইথানল মিশ্রণ ব্যবহার করা হচ্ছে। আখের পাশাপাশি ধানের খড় এবং অন্যান্য কৃষিজ উপাদান থেকেও ইথানল প্রস্তুত করা সম্ভব।
ভারত বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম পেট্রোলিয়াম উপভোক্তা। তবে অধিকাংশ পেট্রোপণ্য আমদানি করতে হয়। এই নির্ভরশীলতা কমানোর জন্যই ব্রাজিলের সঙ্গে এই দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ায় আসতে চাইছে নয়া দিল্লি। ভারত বর্তমানে তার তেলের চাহিদা মেটানোর জন্য আমদানির ওপরই ৮৫ শতাংশ নির্ভরশীল। ইথানলের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে এই নির্ভরশীলতা খানিকটা হলেও কমবে। এর পাশাপাশি পরিবেশগত দিক থেকেও ইথানলের ব্যবহার কার্বন নিঃসরণ কমাতে সহায়তা করবে। ২০২৫ সালের মধ্যে কুড়ি শতাংশ ইথানল মিশ্রণ পেট্রোলে মেশানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে কেন্দ্র সরকার।
প্রসঙ্গত, ভারত-ব্রাজিলের চিনি নিয়ে বিরোধ প্রায় কুড়ি বছরের পুরনো। ব্রাজিল চিনিতে অত্যাধিক ভর্তুকি দিচ্ছে এই অভিযোগে বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনে অভিযোগ জানায় ভারত। তাদের দাবি ছিল এর ফলে ভারত তথা বিশ্বের চিনির বাজারের ক্ষতি হচ্ছে। WTO ভারতের পক্ষে রায় দেওয়ায় ভর্তুকিতে কাটছাঁট করতে হয় ব্রাজিলকে। কিন্তু তাতে লড়াই থামেনি। ২০১৯ সালে ভারতের আখচাষীদের জন্য দেওয়া ভর্তুকি নিয়ে ব্রাজিল সরব হয়। তারা বলে এগুলি WTO-র Agriculture Agreement (AoA)-এর পরিপন্থী। সেই অ্যাপেলেট বলে যে ভারত সর্বোচ্চ দশ শতাংশ ভরতুকির থেকে বেশি দিয়েছে। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছে ভারত। তবে এবার দ্বিপাক্ষিক ভাবে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা চলছে।