২০১৯ সালের ১৯ জুন কামাখ্যায় জয় দুর্গা মন্দিরে নামার রাস্তা থেকে এক মহিলার মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হয়েছিল। সেই ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছিল। এদিকে সেই মহিলার পরিচয় জানা যাচ্ছিল না। তবে ৪ বছর আগের সেই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করল অসম পুলিশ। পাশাপাশি গোয়েন্দারা জানালেন, নিহত মহিলা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার তাঁতিপাড়ার বাসিন্দা। নিহতের নাম শান্তি সাউ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৬৪ বছর। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরও বেশ কয়েকজনের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার দিগন্ত বোরা জানিয়েছেন, অম্বুবাচীর সময়ে কামাখ্যায় নরবলি দিলে বিশেষ ক্ষমতা মিলবে, এমন অন্ধবিশ্বাসের জেরেই এই কাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। (আরও পড়ুন: বৃহস্পতিতে কর্মবিরতি ডিএ আন্দোলনকারীদের, ভোগান্তি পোহাতে হবে আম জনতাকে?)
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ১৮ জুনের রাতে মথুরার এক ব্যক্তি ও এক সাধু মিলে ছক কষে হত্যা করেছিল হুগলির বৃদ্ধাকে। অসম পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এক সাধু ও অন্য দুই মহিলার সঙ্গে কামাখ্যায় অম্বুবাচী মেলা দেখতে এসেছিলেন শান্তি। মথুরার বাসিন্দা প্রদীপ পাঠকের আলাপ হয় তাঁদের সঙ্গে। প্রদীপ তাঁদের কাছে দাবি করেছিল যে তাঁর এক ভাই নাগা সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছিল এবং ২০০৮ সালের ১৮ জুন মারা যায়। সেই মৃত ভাইয়ের স্মৃতিতেই নাকি ১৮ জুন ভূতনাথ শ্মশানে পুজোর আয়োজন করে সে। শান্দিদের সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল প্রদীপ। সেই পুজোয় শান্তি সহ ১২ জন উপস্থিত ছিল।
আরও পড়ুন: দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় আর কিছুক্ষণে হবে বৃষ্টি, রবিতে জারি কালবৈশাখীর সতর্কতা
এদিকে সেখানে আগত সকলকে ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছিল প্রদীপ। শান্তিকে বলি দেওয়ার পরিকল্পনা ছকেই এই কাজ করেছিল প্রদীপ। ২০১৯ সালের ১৮ জুন রাতে কপালি পুজোর পরে সকলে মদ্যপান করেছিলেন। শান্তিকেও জোর করে মদ খাইয়ে বেহুঁশ করে দেওয়া হয়। শ্মশানে পুজো দিয়ে সবাই কামাখ্যা আসেন। সেখানে জয় দুর্গা মন্দিরে পুজো দেয় সবাই। এরপর ফের মদ্যপান করা হয়। এর পরে শান্তিকে সাদা শাড়ি পরিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়। অনেকে মিলে তাঁর হাত-পা চেপে ধরে। একজন তাঁর মুণ্ডচ্ছেদ করে। কম্বলে মুড়িয়ে শান্তির দেহ মন্দিরের সামনেই রেখে দেওয়া হয়। এদিকে শান্তির মাথাটা ব্রহ্মপুত্রে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় মাতাপ্রসাদ নামে এক সাধু জড়িত ছিল। সে শান্তির ফোন এবং আধার কার্ড কোচবিহারের বাসিন্দা কৈলাস বর্মণের বাড়িতে রেখে গিয়েছিল। পুলিশ সেগুলি উদ্ধার করে।
এদিকে এ বছরের ২৫ মার্চ জবলপুরে থেকে সাধু মাতাপ্রসাদকে গ্রেফতার করে অসম পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল। তাকে জেরা করেই ১ এপ্রিল মথুরার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় প্রদীপ পাঠককে। এদিকে ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত বাকিদের খোঁজে এখনও তল্লাশি জারি রেখেছে পুলিশ। তবে মাতাপ্রসাদ এবং প্রদীপই এই ঘটনার মূল চক্রী বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।